জতার খবর পাওয়ার পরে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোটের ফলে রাজ্য জুড়ে গেরুয়া ঝড়। তবে সেই ঝড় থমকে গেল নন্দীগ্রামের জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছে তৃণমূল। গড় অটুট অধিকারীদের।
তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী এবং শিশির অধিকারী প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপিকে ধরাশায়ী করলেও তাঁদের জয়ের ব্যবধান আগের চেয়ে কমেছে। লোকসভা নির্বাচনে জেলায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকা বামফ্রন্টের ভোট প্রাপ্তিও তলানিতে ঠেকেছে। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়াই করা প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের জামানত জব্দ হয়েছে।
নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলনের জেরে তৃণমূলের শক্তঘাটি পূর্ব মেদিনীপুরে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই জয়ের ধারা শুরু হয়েছিল অধিকারী পরিবারের। সেবার তমলুক কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী তৎকালীন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। আর কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী সিপিএমকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে ফের শুভেন্দু অধিকারী সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলিকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জেতেন। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীও প্রায় ২ লক্ষ তিরিশ হাজার ভোটে ব্যবধানে জয়ী হন। এর প্রায় আড়াই বছর পর তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী সাংসদ পদ ছেড়ে বিধানসভায় লড়াই করার জন্য পদত্যাগ করায় উপনির্বাচনে তাঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী উপ নির্বাচনে প্রায় ৫ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।
গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। এবার লোকসভাতেও তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসা বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে ফের জয়ী হয়েছেন দিব্যেন্দু অধিকারী ও শিশির অধিকারী। তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীর বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করের চেয়ে ব্যবধান প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার (গত লোকসভায় ব্যবধান ছিল ২,৪৬,৪৮১)। অন্যদিকে কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস সামন্তের সঙ্গে ব্যবধান রেখেছেন প্রায় এক লক্ষ (গতবার ছিল ২, ২৯, ৪৯০)।
বৃহস্পতিবার গণনার শুরু থেকে বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল প্রার্থীদের পিছিয়ে থাকার খবর মিললেও তমলুক ও কাঁথি কেন্দ্রে দলের এগিয়ে থাকার আভাস মিলছিল প্রথম থেকেই। সেই হিসেবে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের হতাশার মাঝেও এই জেলায় অধিকারী পরিবারের গড় প্রায় অটুট রইল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তবে গতবারের তুলনায় জয়ের ব্যবধান অনেক কমে যাওয়ায় হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারেননি শাসক দলের নেতা-কর্মী সকলেই। যদিও খারাপ ফলের কথা মানতে চাননি দিব্যেন্দু। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আমার ভোট প্রাপ্তির হার আগের চেয়ে বেড়েছে। ফল খারাপ হয়নি। তবে কোথায় কত ভোট পেয়েছি তার বিশ্লেষণ করা হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘অর্থের বিনিময়ে সিপিএমের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে।’’ আর শিশিরবাবুর কথায়, ‘‘জয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
তবে জেলায় দলের জেতার ব্যবধান কমায় জলের দলের প্রধান কাণ্ডারি শুভেন্দু অধিকারীরল ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের একাংশে। দলের তরফে শুধু পূর্ব মেদিনীপুরই নয়, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলাতেও ভোটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মুর্শিদাবাদে তিনটি আসনের মধ্যে ২টি তে তৃণমূল জয়ী হয়েছে। রাত পর্যন্ত খবরে মালদহেও দু’টি আসনে পিছিয়ে তৃণমূল। পূর্ব মেদিনীপুরে দুই প্রার্থীরও জয়ের ব্যবধান কমায় ভোটে তাঁর ভূমিকা নিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার উপর ভোটের প্রচারে ময়নায় এসে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব মন্তব্য করেছিলেন, তৃণমূলের একশোর বেশি এমএলএ তৈরি। ২৩ মে ফল প্রকাশের পর দিদির পিছনে আর এমএলএ-রা থাকবে না। সব মোদীর পিছনে চলে যাবে। তখন দেখবেন আপনাদের শুভেন্দুবাবুও চলে যাবেন’। যদিও বিপ্লবের মন্তব্যকে তুড়ি মেরে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘উনি উন্মাদের মতো কথা বলছেন।’’
এ দিন কাঁথি বা তমলুক, কোথাও গণনাকেন্দ্রের ধারেকাছে শুভেন্দুবাবুকে দেখা যায়নি। পাওয়া যায়নি ফোনেও। বার বার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রিং পর্যন্ত হয়নি তাঁর ফোনে। ওপারে ছিল শুধুই শূন্যতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy