প্রতীকী ছবি।
নাচে-গানে সচেতনতার কথা বলার জন্য তাঁদের ভাতা দিচ্ছে সরকার। অথচ লোকশিল্পীদের দিয়ে এলাকাভিত্তিক সচেতনতার কাজ কার্যত শিকেয় উঠেছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। ডাইনি অপবাদে মারধর, সাপে ছোবল মারলে ওঝার কাছে ছোটা, কাঁচা বয়সে মেয়েদের বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে আকছার।
দিন কয়েক আগের ঘটনা। বিনপুরে সর্পদষ্ট হয়ে মৃত এক শিশুকে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ওঝার ডেরায় ফেলে রাখা হয়েছিল। পচন ধরার পরেও প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় দেহটি কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। কয়েক মাস আগে বেলপাহাড়িতে আবার ডাইনি ঠাওরে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এক মৃগী আক্রান্ত এক মহিলাকে। তিনি ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া থেকে বেলপাহাড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষে জরিমানা গুনে রেহাই মেলে।
অথচ এমন ঘটনায় দাঁড়ি টানতেই লোকশিল্পীদের মাধ্যমে সচেতনতা প্রচারের বন্দোবস্ত করেছে সরকার। ঝাড়গ্রাম জেলায় লোক প্রসার প্রকল্পে নথিভুক্ত শিল্পীর সংখ্যা ১৩,১২২ জন। নিয়ম মাফিক বিভিন্ন সরকারি দফতরের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠান করতে পাঠানো হয়।
সব শিল্পী এক হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পান। অনুষ্ঠান পিছু আরও এক হাজার টাকা করে মেলে। কিন্তু বিভিন্ন দফতর সে ভাবে তাঁদের ব্যবহার করছে না বলে ক্ষোভ রয়েছে লোকশিল্পীদের মধ্যে। শিল্পীদের একাংশ বলছেন, নিয়মিত প্রচারের কাজ পেলে তাঁরাও বাড়তি পারিশ্রমিক পেতে পারেন।
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অবশ্য দাবি, এ পর্যন্ত দলগত ভাবে আট হাজার শিল্পীকে নিয়মিত অনুষ্ঠান করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাকিরা এখনও দল গড়তে পারেননি বলে অনুষ্ঠান দেওয়া যাচ্ছে না। জেলার ভারপ্রাপ্ত তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক বরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা থেকে যেমন রিকুইজিশন আসে, আমরা সেই মতো লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিই।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পরে গত বছর স্বাস্থ্য দফতরের সুপারিশ ক্রমে কয়েকজন লোকশিল্পীকে ডেঙ্গি সচেতনতার প্রচারে নামানো হয়েছিল। এ বছর পুলিশের প্রস্তাব মতো কয়েকটি গ্রামে ডাইনি প্রথা বিরোধী ‘অঙ্গন’ নাটক দেখানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রকল্পে নথিভুক্ত কয়েকটি নাটকের দলকে। তা-ও প্রচারে ঘাটতি থাকছে বলেই অভিযোগ। সমাজকর্মী স্বাতী দত্ত মনে করেন, ‘‘গ্রামের মানুষদের আঞ্চলিক গান, পালাগান, আঞ্চলিক নাটক দিয়ে অনেক বেশি করে বোঝানো যায়। সে জায়গাটায় কিছুটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে।’’ পরিবেশ কর্মী মৃণ্ময় সিংহেরও মত, ‘‘হাতি নিয়ে সচেতনতার কথাও ঝুমুর গানের মাধ্যমে প্রচার হলে ভাল।’’
ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানির আশ্বাস, জনসচেতনতার কাজে আরও বেশি করে লোকশিল্পীদের ব্যবহার করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy