ঘটনাস্থল: এই পাঁচিল টপকেই ঢুকেছিল ডাকাতেরা। ভাঙা হয়েছে আলমারি (ইনসেটে)। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে টিউশন থেকে এসেছে। বাবা রয়েছেন ঘরের মধ্যে। মা রাস্তার কাছে এগিয়ে এলেন ছেলেকে আনতে। মা-ছেলে ঘরে ফিরতেই হামলা।
জনা দশেক ষণ্ডা মার্কা লোক ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল ছেলেকে। তাঁর গলায় পা দিয়ে মাথায় ঠেকাল বন্দুক। তারপর চিৎকার, ‘‘যা আছে বার কর। এখনই।’’ মাত্র মিনিট পাঁচেকের অপারেশন। ছেলেকে এভাবেই বন্দুকের নলের মুখে রেখে বাবা-মাকে মারধর করে তাঁদের মুখ বেঁধে সোনার গয়না, টাকাপয়সা নিয়ে চম্পট দিল ডাকাত দল। শনিবার রাতে চন্দ্রকোনার পানিছড়ায় সার ব্যবসায়ী রাজীব রায়ের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চন্দ্রকোনায় ছোটখাটো চুরির ঘটনা লেগেই রয়েছে। তারই মধ্যে ঘটল এমন ডাকাতি। ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলে যার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গৃহকর্তা পুলিশে অভিযোগ করলেও রবিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। শনিবার রাতে যেভাবে ডাকাতি হয়েছে তাতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “দুষ্কৃতীদের সন্ধানে জোর তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।দ্রুতই ধরা পড়বে।”
রাজীবের স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া জানিয়েছেন, দশ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে অপেক্ষা করছিল দুষ্কৃতীরা। কখনও টিউশন থেকে বাড়ি আসবে রাজীব-বিষ্ণুপ্রিয়ার ছেলে ঋষি। প্রতিদিনের মতো, সন্ধ্যায় বা়ড়ি ফিরেছেন রাজীব। কিন্তু টের পাননি কিছু। রাত সা়ড়ে ৮টা নাগাদ ঋষি ফিরতেই কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা কয়েকজন লোক ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিষ্ণুপ্রিয়ার দাবি , “ডাকাতরা সংখ্যা ছিল দশ-বার জন। সকলের পরনে ছিল কালো রঙের জামা। বাংলায় কথা বলছিল। ছেলের গলায় পা দিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে যা আছে সব দিয়ে দিতে বলে।”
পুলিশ তদন্তে জেনেছে, দুষ্কৃতীরা একসময় বিষ্ণুপ্রিয়ার চুলের মুঠি ধরে মাঠিতে ফেলে দেয়। তারপর শরীর থেকে চাদর খুলে মুখ বেঁধে দেয়। গামছা দিয়ে রাজীবের মুখও বেঁধে দেওয়া হয়। ততক্ষণে প্রাণে বাঁচতে আলমারির লকারের তালা খুলে দিয়েছেন রাজীব। কয়েকজন ডাকাত দোতলায় ওঠার চেষ্টা করেছে। হঠাৎই গুলির শব্দ।
রাজীবের জেঠতুতো দাদা সুমন রায় তাঁর লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক থেকে গুলি চালিয়েছিলেন। ভাইয়ের বাড়িতে কিছু একটা হচ্ছে, এটা আঁচ করে গুলি চালিয়েছিলেন সুমন। গুলির শব্দ শুনে বিপদ বুঝে চম্পট দেয় ডাকাতরা। দুষ্কৃতীরা বাড়ি ছাড়লে রাজীবও গুলি চালান। রাজীব বলছিলেন, “ক’বছর আগেও গ্রামেই আমাদের অন্য আত্মীয়ের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ বার আমাদের বাড়িতেও একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনা ঘটল।’’
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ডাকাতরা গাড়িতে করে এসেছিল। সম্ভবত দূরের রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। দুষ্কৃতীরা মাঠের রাস্তা ধরে পানিছড়া গ্রামে ঢোকে। ডাকাতির ধরন দেখে পুলিশের অনুমান, এলাকায় ‘রেকি’ করে ওই বাড়ি ও এলাকাটিকে বেশ ভাল ভাবে রপ্ত করেছিল দুষ্কৃতীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy