জল থই থই মাঠ। —নিজস্ব চিত্র।
মশার চাষ করছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা!
এমনই অভিযোগ পুরবাসীর। বৃষ্টি হলেই ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবডিহির রাজাবুড়ার মাঠে জল থইথই অবস্থা। নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় দিনের পর দিন জল দাঁড়িয়ে থাকছে মাঠে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জমা জলে মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। মশার উৎপাতে জেরবার বাসিন্দারা। তবুও হুঁশ নেই পুর-প্রশাসনের।
কিছুদিন আগে শহরের দু’জন বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। মশার দাপট ঠেকাতে পুরসভাকে পৃথক বরাদ্দ দিয়েছে পুর-বিষয়ক দফতর। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, তারপরও মশা-নিকেশ করতে পুরসভার সক্রিয়তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। রাজাবুড়ার মাঠটিই তার প্রমাণ। কেশবডিহি এলাকার ঘনবসতির মাঝে রয়েছে রাজাবুড়ার মাঠ। এলাকার রাস্তাটি উঁচু পিচের হয়েছে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনাবিহীন কিছুটা নিকাশি নালাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু মাঠ সংলগ্ন এলাকায় নিকাশির ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে বৃষ্টি হলেই নিচু মাঠে জল জমে যায়। সেই জল বেরোনোর কোনও ব্যবস্থা না থাকায়, দিনের পর দিন জল জমে থাকে। ভারী বৃষ্টি হলে অবস্থা সঙ্গিন হয়ে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী তপন সিংহের কটাক্ষ, “রাজাবুড়ার মাঠের জমা জলে মশার চাষ হচ্ছে। মশার উৎপাতে টেকা দায় হয়ে উঠেছে। জানি না কতদিন এমন দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে।” স্থানীয় বধূ কাজল সিংহ, তাপসী সিংহদের অভিযোগ, “দিনের পর দিন জল জমে রয়েছে, অথচ পুরসভার কোনও হেলদোল নেই। মাঠে জল জমে থাকায় ছোটদের খেলাধুলারও সমস্যা হচ্ছে। মাঠের লাগোয়া ঝোপঝাড়ে সাপের আস্তানা হয়ে রয়েছে।”
এলাকায় মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে সম্প্রতি পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের নেতৃত্বে এক-একটি টিম তৈরি করে বাড়ি বাড়ি সরেজমিনে ঘুরে দেখা হবে। কোথায় জল জমে রয়েছে, জমা জলে মশার লার্ভা আছে কি-না, কতজন বাসিন্দার জ্বর হয়েছে এমন সব তথ্য পুরসভা সংগ্রহ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম পুরসভায় এ ধরনের কোনও কাজই শুরু হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কেবলমাত্র বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশানাশক তেল স্প্রে করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে সে সব ধুয়ে গিয়েছে। কয়েকটি এলাকায় ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে বটে। তবে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে ঝোপঝাড় আর অবরুদ্ধ নিকাশি নিয়ে জেরবার অবস্থা বাসিন্দাদের। ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশন পাড়ায় একটি পরিত্যক্ত ডোবার মশার আস্তানা। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঝরনাপাড়ার একাংশ ঝোপঝাড়ে ভর্তি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রেল বস্তি এলাকায় বৃষ্টির জল জমে থাকে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পেপার মিল লাগোয়া বাবুপাড়াতেও বৃষ্টির জল জমে মশার চাষ হচ্ছে বলে অভিযোগ। ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকারের অভিযোগ, “ঝাড়গ্রাম শহরে নিকাশির বালাই নেই। জমা জলে মশা বাড়ছে। ঝোপঝাড়-আবর্জনাও নিয়মিত পরিষ্কার হয় না।”
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “শহরের কিছু জায়গায় বৃষ্টির জল জমছে। এতে মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি পুরসভাকে লিখিতভাবে জানিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।” ঝাড়গ্রামের উপপুরপ্রধান শিউলি সিংহের দাবি, “প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত মশানাশক তেল স্প্রে করা হচ্ছে। ঝোপঝাড় সাফ করা হচ্ছে। অনেক নিকাশি নালা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির জল জমার কথা নয়। তা-ও এমন হলে খোঁজ নিয়ে দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy