সুতাহাটায় রাস্তার উপরে কালীপুজোর শোভাযাত্রা। নিজস্ব চিত্র
দৃশ্য-১: ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আটটা। হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছোট-বড় গাড়ি। তার মধ্যে কার্যত কপালে হাত দিয়ে বসে রয়েছেন আরোহীরা।
দৃশ্য-২: ঠিক একই সময়ে হলদিয়া থেকে নন্দকুমার রাজ্য সড়ক দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ট্যাবেলো এবং কালী প্রতিমা। রাস্তা আটকে হওয়া সেই শোভাযাত্রা দেখতে তখন ভিড় জমিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
দু’টি ছবিই শুক্রবার রাতের সুতাহাটার। ওই দিন সেখানেই ছিল কলকাতার রেড রোডের দুর্গাপুজোর কার্নিভালের অনুকরণে হওয়া কালী পুজোর শোভাযাত্রা তথা কার্নিভাল। আর স্থানীয়দের আশঙ্কা সত্যি করে সেই শোভাযাত্রার ফলে শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যহত হল রাজ্য সড়কের যানচলাচল। অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও আটকানো যায়নি যানজট।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কালী পুজোর বিসর্জন উপলক্ষে সুতাহাটায় প্রথমবার কার্নিভালের আদলে প্রতিমা বিসর্জনের বিশেষ শোভাযাত্রা আয়োজন করেছিল স্থানীয় একটি ক্লাব। অভিযোগ, সেই শোভাযাত্রার জন্য হলদিয়া-নন্দকুমার রাজ্য সড়কে বিকেল ৫টা থেকে চৈতন্যপুরে এবং উল্টো দিকে মঞ্জুশ্রীর মোড়ে গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬ থেকে শুরু হয় শোভাত্রা। চলে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত। আর তার ফলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ভোগান্তির শিকার হন ওই রাস্তা যাওয়া নিত্য যাত্রীরা। অভিযোগ, সুতাহাটার দুপাশে বন্ধ হয়ে দীর্ঘক্ষণ হলদিয়ার সঙ্গে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল জেলার বিভিন্ন অংশ।
মঞ্জুশ্রীর মোড়ের দিকের যানজটে আটকে ছিলেন মনীন্দ্রনাথ দাস নামে এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘কারখানায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলাম। কিন্তু বাস মঞ্জুশ্রীতে এসে থেমে গিয়েছিল। যাত্রীদেরও নামিয়ে দেওয়া হয়। তারপর টোটোয় চেপে গিয়েছি। কিন্তু তাতেও গাড়ির লম্বা লাইনে আটকেছি দীর্ঘক্ষণ। শনিবার মনীন্দ্রর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাস্তায় আটকে পড়লে কী দুর্ভোগ হয়, তা কাল সন্ধ্যায় হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গিয়েছি।’’ চৈতন্যপুরে পৌঁছে সন্ধ্যা থেকে আটকে ছিলেন অনুপ মাঝি নামে এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘টাউনশীপে দিদির বাড়ি যাচ্ছিলাম। কিন্তু কোনও গাড়ি না যাওয়ায় হেঁটে হেঁটে সুতাহাটা গিয়েছি। তারপর টোটো চেপে দিদির বাড়ি।’’
ওই শোভাযাত্রার উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার হলদিয়ার প্রেম রোডের কাছে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলি প্রতিমা ও ট্যাবলো নিয়ে পৌঁছয়। তারপর ধীরে ধীরে তারা শোভাযাত্রায় নানা আকর্ষনীয় থিম তুলে ধরে। পরে তা সুবর্ণ জয়ন্তী হলের কাছে শেষ হয়। কিন্তু যানজটে ভোগান্তির শিকার হওয়া একাংশদের প্রশ্ন, শোভাযাত্রা না হয় জমকালো হয়েছে, কিন্তু তার জেরে অন্যদের কষ্টের মধ্যে পড়তে হবে কেন?
এ ব্যাপারে হলদিয়ার পুর পারিষদ তথা শোভাযাত্রা অন্যতম উদ্যোক্তা সত্যব্রত দাস বলেন, ‘‘যানজট হয়েছিল, সে কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে ভাল কিছু করতে গেলে একটু কষ্ট তো হবেই।’’ সত্যব্রতের অবশ্য দাবি, শোভাযাত্রার মধ্যেই তাঁরা কিছু গাড়ি পার করে দিয়েছেন। তার মধ্যে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সও রয়েছে।
শোভাযাত্রা এবং যানজট প্রসঙ্গে জেলা ট্রাফিক পুলিশের সুপার আমিনুল ইসলাম খান শনিবার বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় বাস চালানো যাবে না বলেই আগেই জানানো হয়েছিল। তবে চৈতন্যপুর এবং মঞ্জুশ্রী পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। রাত ন’টার পরে সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy