পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকায় পেট্রল পাম্পের উল্টো দিকে বসানো হয়েছে বোর্ড। নিজস্ব চিত্র।
দখলমুক্ত করতে হবে ফুটপাত। প্রয়োজনে গড়তে হবে ‘হকার জ়োন’। জুনের শেষে দু’দফায় নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করে পুরসভাগুলিকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সময়ও বেঁধে দিয়েছেন তিনি, এক মাস। এরপর পাশের শহর মেদিনীপুরেও ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে রাস্তা ফাঁকা করার কাজ করছে পুরসভা। অথচ খড়্গপুর শহরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকরে পুরসভার অভিযান কই— এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন! বরং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও খড়্গপুরে ফুটপাত ছাড়িয়ে ব্যস্ত রাস্তায় বাড়ছে দখল!
খড়্গপুর শহরে রাস্তা দখলমুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকরে পুরসভার ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠল। গত ২৪ জুনের পরে গত ২৭ জুন ফের বৈঠকে বসে একমাসের সময়সীমা বেঁধে রাস্তা ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় গত ২৪ জুনের পর থেকেই রাস্তা দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু হয়। রীতিমতো পথে নেমে পুরপ্রধান থেকে পুর-কর্তৃপক্ষকে জবরদখল সরাতে দেখা গিয়েছে। বাদ নেই পাশের শহর মেদিনীপুরও। নিয়মিত মাইকিং-সহ জবরদখল সরাতে অভিযানে দেখা যাচ্ছে পুরপ্রধান সৌমেন খানকে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে দিন ২০ কেটে গেলেও খড়্গপুর শহরে জবরদখল সরাতে পুরসভার সদর্থক ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে! শহরবাসীর দাবি, পুরসভাকে রাস্তা দখলমুক্ত করতে তেমন অভিযানে দেখাই যায়নি। চাপের মুখে একদিন ছোট ট্যাংরায় হাসপাতালের বাইরে থাকা ঝুপড়ি দোকানিদের নর্দমা উপর দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিলেও, তা এখনও কার্যকর করতে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।
হাসপাতালের সামনে নিয়মিত যানজট চলছেই। সরে যায়নি ওই ঝুপড়ি দোকানিরা। এর পরে একদিনের ওই অভিযানেই কার্যত ‘ক্লান্ত’ পুরসভা নতুন করে শহরের কোথাও অভিযান চালায়নি। ১৫ দিন কেটে গেলেও পুরসভা সময় নিয়েছে হকারদের তালিকা তৈরিতেই। হয়নি কোনও অভিযান। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কেন ফাঁকা হল না শহরের রাস্তা ও ফুটপাত সেই প্রশ্ন তুলছে শহরবাসী। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এখন তো জবরদখল করা দোকানিদের তালিকা তৈরি করছি। এখানেও রাস্তা দখলমুক্ত করা হবে।’’ অবশ্য কবে মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ কার্যকর হবে তা নিয়ে পুরসভার কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বরং শহরে বাড়ছে জবরদখল। রেলের এলাকা ছাড়া শহরের পুর-এলাকায় খরিদা, মালঞ্চ, ঝাপেটাপুর, ছোট ট্যাংরা, কৌশল্যা, পুরাতনবাজার, ইন্দার মূল ব্যস্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে দখল হয়ে রয়েছে। খরিদা ও মালঞ্চ এলাকায় পুরসভার তৈরি করা ফুটপাতও দখল হয়ে গিয়েছে। এমনকি মালঞ্চ রোডে ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার উপর উঠে এসেছে চাউমিন, ফুচকা, মোমো, ধোসা-ইডলির দোকানপাট। ঠেলায় বসছে এ সব ফাস্টফুডের দোকান। ফলে সঙ্কীর্ণ হচ্ছে রাস্তা। রাস্তার উপরেই পার্কিং করা হচ্ছে গাড়ি, মোটরসাইকেল।
শহরবাসীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও মালঞ্চ রোডে একটি চাউমিনের দোকানের পাশাপাশি নতুন করে দু’টি মোমোর দোকান বসে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরসভার হকার তালিকায় নাম তুলতেই নতুন করে রাস্তা দখলের এই প্রবণতা বাড়ছে বলে অনুমান শহরবাসীর। অথচ পুরসভা এখনও পর্যন্ত এসব এলাকায় অভিযানেই নামেনি বলে অভিযোগ উঠছে।
খরিদার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী বিজন দত্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর যে নির্দেশ তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। সেটা পুরসভার মেনে চলা উচিত।’’ আবার কৌশল্যার বাসিন্দা ব্যাঙ্ককর্মী অমর মৈত্র বলেন, ‘‘কৌশল্যাতে তো ফুটপাত বলেই আর কিছু নেই। বহুবছর ধরে দখল হয়ে গিয়েছে।’’
খড়্গপুর শহরের রাজগ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী সুখময় প্রধান অবশ্য বলছেন, ‘‘শুনছি তো পুরসভা সমীক্ষা চালিয়ে তালিকা তৈরি করছে। তবে রেলের অনেক এলাকা রয়েছে। হকার জ়োন করার জমিরও অভাব।’’ বিষয়টি নিয়ে পুর-প্রতিনিধি তথা বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অভিষেক আগরওয়াল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে বোর্ড মিটিং হলেও পুরসভা এই বিষয়ে তো আলোচনাই করেনি। তাতেই বোঝা যাচ্ছে জবরদখল সরাতে এদের সদিচ্ছা কতটা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy