দেবব্রত বিশাই। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের জেলা (কাঁথি) সভাপতির গাড়ি চালকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল পটাশপুরে। কয়েক বছর আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষীর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে জেলা রাজনীতিতে চর্চা হয়েছিল। পুলিশি তদন্তে সেই মৃত্যু-রহস্য এখনও উদ্ঘাটন হয়নি। এর মধ্যেই তৃণমূল নেতার গাড়ির চালকের মৃত্যু। তবে ওই যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক বিতর্ক সামনে আসেনি। বরং উঠে এসেছে সম্পর্কের টানাপোড়ানের তত্ত্ব। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই মৃত্যুর কারণ জানতে সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন পটাশপুরের পীযূষকান্তি পন্ডা। পটাশপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হিসাবে থাকাকালীন তিনি মাস দুয়েক আগ নতুন গাড়ি কিনেছিলেন। পীযূষের ওই গাড়ি চালাতেন পটাশপুরের মধুপুরের বাসিন্দা দেবব্রত বিশাই (২১)। দলের জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরেও দেবব্রতকে নিজের গাড়ির চালকের দায়িত্বে বহাল রাখেন পীযূষ। মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পরিবারের লোকেরা তাঁকে ঝুলতে দেখেন। ভোরে পটাশপুর থানার পুলিশ বাড়ি থেকে যুবকের দেহ উদ্ধার করে।
পরিবার সূত্রের খবর, অবিবাহিত ছিলেন দেবব্রত। তাঁর পরিবারও তৃণমূলের সমর্থক। তিন ভাইবোনের মধ্যে দেবব্রত পরিবারের একমাত্র ছেলে। তাঁর সঙ্গে পাশের গোকুলপুর গ্রামের এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে পরিবারের দাবি। মঙ্গলবার দেবব্রত কাজে ছুটি নিয়েছিলেন। জেলা সভাপতি পীযূষ অন্য এক চালককে নিয়ে বাজকুলে মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠান-সহ একাধিক সাংগঠনিক কর্মসূচি সেরেছেন। দেবব্রত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মী বাজারে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে গভীর রাত পর্যন্ত প্রেমিকার সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা বলেও বলে দাবি। পরে তাঁর গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেহ মেলে।
এ দিন পীযূষকান্তি দেবব্রতর বাড়িতে আসেন। তাঁর মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলেন। পটাশপুর থানার পুলিশ দেবব্রতের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। মোবাইল ফোনের কল লিস্ট এবং অন্য যাবতীয় তথ্য পরীক্ষা করছে তারা। তবে ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পরিবারের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে এ দিন দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পীযূষকান্তি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দেবব্রত ছুটি নিয়েছিলেন। এ দিন সকালে জানতে পারি ওঁর মৃত্যু হয়েছে। ওঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। শুনেছি সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে উপযুক্ত তদন্তে দাবি জানিয়েছি।’’
উল্লেখ্য, রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী থাকাকালীন শুভেন্দু অধিকারীর এক দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তী কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে মাথায় গুলি লেগে মারা যান। মৃত দেহরক্ষীর পরিবার থানায় খুনের অভিযোগ করলেও পুলিশি তদন্তে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু সঠিক কারণ সামনে উঠে আসেনি। ওই মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি রাজনৈতিক চাপানউতোর হয়েছিল। পটাশপুরের তৃণমূলের জেলা সভাপতির গাড়ি চালকের মৃত্যুতে আপাতত রাজনৈতিক কোনও জলঘোসা হয়নি। বিরোধী বিজেপি শুধু ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দলের কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সম্পাদক স্বপন দাস বলেন, ‘‘তৃণমূলের জেলা সভাপতি গাড়ি চালকের রহস্য মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। পুলিশি তদন্তে যেন মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উম্মোচন হয়। মৃতের পরিবারের প্রতি দলের তরফে সমবেদনা জানাই।’’
এ ব্যাপারে এগরার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক মহম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, ‘‘যুবকের দেহ উদ্ধার করে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy