Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Youth Squad

ফের বাম নজরে কিশোর বাহিনী

বাম বিশেষ করে সিপিএম নেতৃত্বর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই কিশোর বাহিনীর কার্যকলাপে জোর দেওয়া হচ্ছে।

রবিবার গড়বেতার মৌলাড়ায় কিশোর বাহিনীর শিবির।

রবিবার গড়বেতার মৌলাড়ায় কিশোর বাহিনীর শিবির। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গড়বেতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১২
Share: Save:

গ্রামাঞ্চলে প্রভাব বাড়াচ্ছে আরএসএস। বামেরা ফিরছে কিশোর বাহিনীতে!

গত শতকের আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে বাম রাজ্যে ঝড় উঠেছিল 'কিশোর বাহিনী'র কার্যকলাপে। রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই শিশু-কিশোরদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই বাহিনী। শাখা অঞ্চল স্তর পর্যন্তও গজিয়ে উঠেছিল এই বাহিনীর। মূলত ১৬ বছর বয়সী শিশু - কিশোরদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে তাঁদের 'পঞ্চ শিক্ষা' দেওয়া হত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা, দেশপ্রেম, বিশ্বমৈত্রী— এই পাঁচ শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি কিশোর বাহিনীতে হত শারীরিক কসরতও। বিশেষ প্রশিক্ষক দিয়ে করানো হত প্যারেড। এই পুরো বাহিনীকে মূলত অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা পরিচালনা করলেও, পেছন থেকে এর লাগাম থাকত বাম বিশেষ করে সিপিএমের হাতে। সেই সময় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করতেন, এই বাহিনীর মাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শ সুকৌশলে প্রচার করত বামেরা। আবার বাহিনীর কিশোরেরা যুবক বয়সে সক্রিয় রাজনীতিতেও নেমে পড়তেন। ফলে সিপিএমে কার্যত 'সাপ্লাই লাইন' ছিল এই কিশোর বাহিনী। সেই কিশোর বাহিনীর কার্যকলাপ থমকে গিয়েছিল ২০১১ সালে বাম সরকারের পতনের পরপরই। কিছু কিছু জেলা শহরে সক্রিয়তা লক্ষ্য করা গেলেও, অনেক জেলাতেই শাখা স্তরে পাঠ চুকে গিয়েছিল কিশোর বাহিনীর। সূত্রের খবর, সেই কিশোর বাহিনীকে আবার গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

বাম বিশেষ করে সিপিএম নেতৃত্বর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই কিশোর বাহিনীর কার্যকলাপে জোর দেওয়া হচ্ছে। একবছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের বীরসিংহ এলাকায় কিশোর বাহিনীর সাংগঠনিক শিবির হয়েছিল। রবিবার গড়বেতা ১ ব্লকের আমকোপা অঞ্চলের মৌলাড়া এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হয় অনুরূপ একটি শিবির। সাংগঠনিক শিবিরের সাথে ছিল শিশু - কিশোরদের প্রশিক্ষণ পর্বও। শিবিরের আগে শিবিরে যোগ দেওয়া শিশু-কিশোরদের নিয়ে পদযাত্রা ফুলমণি গ্রাম পরিক্রমা করে। শিশু-কিশোররা স্কুলের নির্ধারিত পোশাক পড়েই যোগ দেয় শিবিরে। তাদের শারীরিক কসরত শেখানো হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় কিশোর বাহিনীর এদিনের শিবির। মূল শিবিরে না থাকলেও, উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা ও এরিয়া কমিটির কয়েকজন নেতৃত্ব।

কেন এই শিবির? আয়োজক শ্যামল হেমব্রম, বংশী পালরা বলেন, "ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে গ্রামে গ্রামে যে ভাবে প্রচার বাড়ছে, সেখানে মানুষ বিভ্রান্ত। শিশু-কিশোরদেরও সঠিক দিশা দেওয়ার প্রয়োজন। তাই ফের কিশোর বাহিনীর কার্যকলাপ শুরু করতে হচ্ছে।" শিবিরে ছিলেন কিশোর বাহিনীর জেলা কার্যকরী পরিষদের আহবায়ক অশোক পাখিরা। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, "একসময় অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় তিন হাজার ভাইকে নিয়ে কিশোর বাহিনীর ৩৬ টা শাখা খোলা হয়েছিল। গত বছর বীরসিংহে সাংগঠনিক শিবির করেছি। বিদ্যাসাগরের গ্রামে আরও একটা কর্মসূচি করব। এ ভাবেই কিশোর বাহিনীর কার্যক্রম প্রসারিত করে আগামী প্রজন্মকে নতুন দিশা দেখানো হবে।" বাহিনীর রাজ্যের মুখ্য সংগঠক পীযুষ ধর ১৯৪৩ সালে সুকান্ত ভট্টাচার্যদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিশোর বাহিনীর পুরনো ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, "আজকের দিনে রেড ভলান্টিয়ার্সরা যা করছে, একসময় কিশোর বাহিনী তা করত। সেই কিশোর বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য অনেক চেষ্টা হয়। ১৯৮৫ সালের ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় নবপর্যায়ে কিশোর বাহিনী।"

মূল শিবিরে না থাকলেও স্কুলের বাইরে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৌগত পণ্ডা। তিনি বলেন, "তৃণমূলের মদতে বিজেপি ও আরএসএস ধর্মের নামে বিভাজন করার চেষ্টা করছে। আরএসএস প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সেই ঘৃণ্য প্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক দিশা দেখানোর কাজ করছে কিশোর বাহিনী।" বিজেপি ও তৃণমূল অবশ্য কিশোর বাহিনীর নামে বামেদের কার্যকলাপকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তৃণমূল বিধায়ক উত্তরা সিংহ বলেন, "বামেরা তো শূন্য, ওদের আবার কাজ! মানুষ তাঁদের আগেই হঠিয়ে দিয়েছে।" বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ লোধা বলেন, "আসলে এসবই বিজেপিকে আটকানোর কৌশল। তৃণমূল জায়গা দিচ্ছে সিপিএমকে। এসব করে বিজেপির জয়রথ থামানো যাবে না।"

অন্য বিষয়গুলি:

Garbeta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy