ভাতা বাড়ন্ত! যাতায়াতের জ্বালানি ভরতে হচ্ছে গাঁটের কড়ি দিয়ে। বাড়তি খরচ এড়াতে তাই প্রশাসনিক বৈঠকে যাচ্ছেন না পঞ্চায়েতের বহু প্রতিনিধি। এগরা মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, এর জেরে বিভিন্ন এলাকায় সরকারি প্রকল্পের কাজ থমকে যাচ্ছে।
সরকারি প্রকল্পের রূপায়ণ থেকে বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। গ্রাম পঞ্চায়েতে অফিস থেকে ব্লক প্রশাসনিক অফিসে হামেশাই এই সব বৈঠক হয়। প্রতি মাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫ দিন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এই কারণে দৌড়তে হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। এগরা মহকুমার পটাশপুর-১ এবং ২ ব্লকে গত দেড় বছরে এই ধরনের বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিত থাকার প্রবণতা বেড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কেন বৈঠকে অনুপস্থিত থাকছেন জনপ্রতিনিধিরা, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে একটু অন্য রকম তথ্য।
একাংশ জন প্রতিনিধি তাঁদের অনুপস্থিতির পিছনে ব্যক্তিগত কারণ জানালেও একটা বড় অংশের দাবি, সরকারি ভাতার টাকা পর্যাপ্ত হচ্ছে না। মাসে একাধিক বার বিভিন্ন এলাকায় বৈঠকে যেতে গাড়ি বা মোটরসাইকেলে যে জ্বালানি ভরতে হয়, তা ভাতার টাকায় কুলোচ্ছে না। মোটরবাইকের জ্বালানি এবং টিফিনের জন্য বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। যা তাদের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন মাইতি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক বৈঠক ও শিবির আগের থেকে বহুগুণ বেড়েছে। সেই সকল বৈঠকে উপস্থিত থাকতে জন প্রতিনিধিদের মোটরবাইকের তেল ও টিফিন খরচের জোগাড় ভাতার টাকায় হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। তাই পকেট থেকে খরচের ভয়ে প্রাশাসনিক বৈঠকে অনেক জনপ্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকছেন। ফলে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদস্তরের জনপ্রতিনিধিদের সাম্মানিক ভাতা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সাম্মানিক ভাতা বেড়ে পঞ্চায়েত প্রধানদের প্রতি মাসে হয় পাঁচ হাজার টাকা। পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের তিন হাজার টাকা, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির ছ’হাজার টাকা, কর্মাধ্যক্ষের পাঁচ হাজার টাকা, পঞ্চায়েত সমিতির সাধারণ সদস্য সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাতা হয়। জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে ন’হাজার টাকা, কর্মাধ্যক্ষ সাত হাজার টাকা এবং সাধারণ সদস্যদের পাঁচ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। আর প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের প্রাশাসনিক কাজ ও বৈঠকে যাওয়ার জন্য অফিস থেকে অতিরিক্ত পরিবহণ ভাতা পাওয়ার সংস্থান রয়েছে।
এ দিকে, প্রশাসনিক বৈঠকে গরহাজির থাকায় এলাকার প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি। কোথায় সেই প্রকল্প দেরিতে হচ্ছে, আবার প্রকল্পের কাজের পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকলে সমস্যাও সমাধান হচ্ছে না। এই কারণে এগরায় পিএইচই জলপ্রকল্পে চালু করতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন পড়ছে প্রশাসন। ফলস্বরূপ জল প্রকল্পের সমস্যা সমাধান করতে গ্রামে গ্রামে ছুটতে হচ্ছে বিডিওদের। বিধানসভা ভোটের আগে এই প্রবনতা বাড়তে থাকলে চিন্তায় ব্লক প্রশাসন। এগরার মহকুমাশাসক মনজিৎ কুমার যাদব অবশ্য বলছেন, ‘‘সরকার যেটুকু ভাতা দেন, তাই দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে। তবে এই ধরনের কোনও সমস্যার কথা আমাদের কাছে আসেনি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)