ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের মাঠে হেলিকপ্টার মহড়া। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
আজ, মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচিতে নেই পিংলায় যাওযার ইঙ্গিত। এই জেলা সফর ঘিরে প্রশাসনও প্রস্তুত।
এ দিন সন্ধ্যার মধ্যে তিনি পৌঁছে যাবেন ঝাড়গ্রামে। থাকবেন রাজবাড়ির অতিথিশালায়। কাল, বুধবার ঝাড়গ্রামেই প্রশাসনিক বৈঠক করবেন তিনি।
সদ্য পুরভোট মিটেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। গোড়ায় ঠিক ছিল, চলতি মাসের শুরুতে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য সফরের জন্য সেই সফর পিছিয়ে যায়। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক সেরে সন্ধ্যার মধ্যে ঝাড়গ্রামে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে রাতেই দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় বসতে পারেন নেত্রী বলে খবর।
ইতিমধ্যেই পিংলায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবিতে বিরোধীরা সরব হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে ওই কারখানায় বাজির আড়ালে বোমা তৈরি হত। এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত রঞ্জন মাইতির বাড়ি লাগোয়া জমিতেই এই কারখানা চলত। কারখানার মালিক রামপদ মাইতির সঙ্গেও রঞ্জনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, পুলিশকে একাধিকবার কারখানার কথা জানানো হলেও কোনও কাজ হয়নি।
সম্প্রতি ঘটনাস্থলে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘হিম্মত থাকে তো কালই এলাকায় আসুন। মানুষের ক্ষোভের কথা শুনুন।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিরোধীদের আবেদনে যে মুখ্যমন্ত্রী আপাতত সাড়া দিচ্ছেন না, তা তাঁর সফরসূচি থেকেই স্পষ্ট।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে ঝাড়গ্রামে আসবেন। হেলিকপ্টারেই মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতায় ফিরে যাওয়ার কথা। এ জন্য ঝা়ড়গ্রাম শহরে রাজ কলেজ মাঠে ও পুকুরিয়ার রাজপাড়া মাঠে হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। এ দিন ওই দু’টি মাঠেই হেলিকপ্টার মহড়াও দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচিতে পিংলায় যাওয়ার কোনও কর্মসূচি না থাকলেও সতর্ক প্রশাসন। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছেন, “শেষ মুহূর্তে কী হবে তা বলা কঠিন! তাই আমরা প্রস্তুত থাকছি ”
বিরোধীরা যখন পিংলা কাণ্ডকে সামনে রেখে প্রশাসনকে বিঁধছে। ইতিমধ্যে পিংলায় ঘটনাস্থলে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহরা। আজ, মঙ্গলবার আসার কথা বামফ্রন্টের রাজ্য চেয়ারম্যান বিমান বসুর। অথচ তৃণমূলের কোনও রাজ্য স্তরের নেতা এখনও পিংলায় না যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। বিস্ফোরণের পরের দিন এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি তথা এলাকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য অজিত মাইতি। এই ঘটনার পর তাই অতিসতর্ক জেলা তৃণমূল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপাতত ক’দিন চুপ থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব।
বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আর সেই সূত্রে পুলিশের ‘কাছের লোক’ হয়ে ওঠা, এই সম্পর্ককে ঢাল করেই বেআইনি এই কারবার চালাতেন রামপদ ও রঞ্জন। সদ্য অপসারিত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গৌতম জানার সঙ্গে রঞ্জনের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলেও অভিযোগ। স্থানীয়রা রঞ্জনকে তৃণমূলের বুথ সভাপতি হিসেবেই চিনতেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। সস্ত্রীক রামপদ বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন।
বিস্ফোরণের পর এক দিন পেরোতে না-পেরোতেই পিংলা থানার ওসি পঙ্কজ মিস্ত্রিকে ‘ক্লোজ’ করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, এটা বিভাগীয় ব্যাপার। বিরোধীরা অবশ্য বলছে, ঘটনার দায় যে পুলিশেরও, ওসির অপসারণ থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। চাপে পড়েই পিংলার ওসিকে সরিয়ে দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছে জেলা পুলিশ।
অন্য দিকে, জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলও নতুন কিছু নয়। গোষ্ঠীকোন্দলের জন্য পুরভোটে কিছু এলাকায় দলের ফল প্রত্যাশিত হয়নি বলেই একান্তে মানেন শাসক দলের একাংশ নেতা। এই পরিস্থিতিতে জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন, সেটাই দেখার। জেলা পুরভোটের সাফল্য নিয়ে সংশয় ছিল শাসক দলের অন্দরে। অবশ্য ফল খুব একটা খারাপ হয়নি। জেলার ৬টি পুরসভার মধ্যে ঘাটাল, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা ও খড়ার- এই ৪টিতে ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ফলপ্রকাশের দিনই। রামজীবনপুর এবং খড়্গপুরে ত্রিশঙ্কু ফল হয়। দল ভাঙিয়ে ত্রিশঙ্কু দুই পুরসভায় পুরবোর্ড গঠনের চাবি খুলতেও তত্পর হন শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে পিংলা বিস্ফোরণ কাণ্ড শাসক দলের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy