Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

আঠারোতেই দৃষ্টান্ত হয়েছিল তমাল

নেশাগ্রস্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোই ছিল তার ব্রত। সে নিজে আগেই নেশা করা ছেড়েছিল। অন্য নেশাগ্রস্তদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর কাজে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি নেশা নিরাময় কেন্দ্রকে সাহায্য করত তমাল প্রধান। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। গত ৫ মে গভীর রাতে হলদিয়ার সুতাহাটার বাসিন্দা দিবাকর দাস নামে এক যুবককে গাড়িতে চাপিয়ে মেদিনীপুরের ওই কেন্দ্রে নিয়ে আসার সময় মাদপুরে পথ দুর্ঘটনা ঘটে।

মৃত তমাল প্রধান। নিজস্ব চিত্র।

মৃত তমাল প্রধান। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০০:৫৪
Share: Save:

নেশাগ্রস্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোই ছিল তার ব্রত।

সে নিজে আগেই নেশা করা ছেড়েছিল। অন্য নেশাগ্রস্তদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর কাজে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি নেশা নিরাময় কেন্দ্রকে সাহায্য করত তমাল প্রধান। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন।

গত ৫ মে গভীর রাতে হলদিয়ার সুতাহাটার বাসিন্দা দিবাকর দাস নামে এক যুবককে গাড়িতে চাপিয়ে মেদিনীপুরের ওই কেন্দ্রে নিয়ে আসার সময় মাদপুরে পথ দুর্ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় হলদিয়ার হাতিবেড়িয়ার বাসিন্দা তমালের। মারা যান ওই কেন্দ্রের কর্মী অতীশ দেবনন্দনও। ঘটনার কুড়ি দিন পরেও শোকস্তব্ধ মৃতদের পরিজনেরা।

হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্‌ড বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের ছাত্র বছর আঠারোর তমালের বাবা সুকান্ত প্রধান একটি সংস্থার ঠিকাকর্মী। তমাল পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলা, ছবি আঁকা ও কবিতা লেখাতেও বিশেষ দক্ষ ছিল। বাবার অনুপ্রেরণাতেই ফুটবল খেলা শুরু করেছিল এই তরুণ। তবে বছর দু’য়েক আগে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে মাদকের নেশা শুরু করে তমাল। ছেলের নেশা করার কথা জানতে পেরে সুকান্তবাবু তাঁকে মেদিনীপুরের ওই নেশা নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই টানা ছ’মাস চিকিৎসার পর তমাল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। ওই কেন্দ্রের ইন-চার্জ প্রতীক বসু বলেন, “তমাল খুব দ্রুত নেশার কু-প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছিল। নেশামুক্ত হওয়ার পরেও ও নিয়মিত কেন্দ্রের ‘নার্কোটিক অ্যানোনিমাস মিটিং’-এ আসত। তমাল অনেক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে এই কেন্দ্রের যোগাযোগও করিয়ে দিত।”

একই ভাবে সুতাহাটার বাসিন্দা দিবাকর দাসের সঙ্গে মেদিনীপুরের ওই কেন্দ্রের যোগাযোগ করিয়ে দেন তমাল ও সুকান্তবাবু। ওই কেন্দ্রের কর্মী ইমতিয়াজ আলি শাহ বলেন, “কোনও গরিব নেশাগ্রস্তের চিকিৎসার খরচ কমানোর জন্য তমাল আমাদের কাছে আবদারও করতেন। আমরা ওর মৃত্যু ভুলতে পারছি না।” আর সুকান্তবাবু বলছেন, ‘‘নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছেলের মৃত্যু হলে আমার বেশি কষ্ট হত। কিন্তু ছেলে নেশামুক্ত হয়ে অন্যকে সচেতন করার যে কাজ করছিল তাতে আমি গর্বিত। আমার মনে হয়, মৃত্যুর পরেও ওকে সকলে মনে রাখবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Alcohol Teenager
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE