বই হাতে পেয়ে খুশি পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
স্কুলছুটদের ফের ক্লাসঘরে ফেরাতে বইকেই হাতিয়ার করা হয়েছিল। সুফলও মিলেছে তাতে।
পরিসংখ্যান বলছে, হলদিয়ার সুতাহাটায় জয়নগর হাইস্কুলে ‘বুক ব্যাঙ্কে’র আকর্ষণে ফের স্কুলে যাচ্ছে এক সময় পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া বহু পড়ুয়া। ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০০৮ সালে ‘বুক ব্যাঙ্ক’ শুরু হওয়ার পরে পড়ুয়াদের স্কুল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। তফসিলি এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই এলাকার কচিকাঁচারা স্কুলমুখী হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
কী এই ‘বুক ব্যাঙ্ক’?
স্কুলের ইংরাজি শিক্ষক কানাই মোহন্ত বিষয়টি খোলসা করলেন। জানালেন, বই কিনতে না পেরে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে। তাই স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে কানাইবাবু এবং তাঁদের স্কুলের কয়েকজন সদস্য মিলে পড়ুয়াদের সস্তায় বই দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ ব্যাপারে আর্থিক সাহায্যের জন্য তাঁরা হলদিয়ার একাধিক শিল্পসংস্থার দ্বারস্থ হন। শেষে একটি সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পান তাঁরা। সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা রাখেন বই কেনার জন্য। পরে ওই বই সস্তায় দেওয়া হয় পড়ুয়াদের মধ্যে। গোটা এই প্রক্রিয়ার নামই হল ‘বুক ব্যাঙ্ক’।
কানাইবাবুই ‘বুক ব্যাঙ্কে’র দেখাশোনা করেন। তিনি জানালেন, ছাত্রাবস্থায় তাঁকে অন্যের থেকে বই চেয়ে পড়তে হত। তাই দুঃস্থ পড়ুয়াদের সস্তায় বই দেওয়ার ভাবনাটা এসেছিল তাঁর। ‘বুক ব্যাঙ্কে’র মাধ্যমে জয়নগর হাইস্কুল প্রতি বছর নামমাত্র টাকায় পাঁচশো ছাত্রছাত্রীকে পাঠ্যবই তুলে দেন। কানাই বলেন, ‘‘সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির সহায়িকা-সহ সব পাঠ্যবইয়ের দাম ৯০০ টাকা। তা মাত্র ৯০ টাকায় দেওয়া হয়। আর নবম শ্রেণির ১২টি বইয়ের দাম ২৫০২ টাকা। কিন্তু পড়ুয়াদের থেকে নেওয়া হয় ২৫০ টাকা।’’ তেমনই দশম শ্রেণিতে ২২২০ টাকার বই দেওয়া হয় ২২০ টাকায়। মলাট দেওয়ার কাগজ এবং খাতাও দেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের।
পড়ুয়াদের থেকে পাওয়া টাকা জমা পড়বে ‘বুক ব্যাঙ্কে’র অ্যাকাউন্টে। কানাইবাবু জানান, সাধারণত দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েরাই ওই সুযোগে উপকৃত হয়। পড়ুয়ারা পুরনো বই যত্ন করে রেখে ফেরত দিলে তাদের পরের ক্লাসের নতুন বই দেওয়া হয়। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র গৌতম কোটাল, স্থানীয় ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মল্লিকরাও ওই বইয়ের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করেছেন।
সস্তায় বই পেয়ে খুশি প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল, আফসানা খাতুন, টিঙ্কু পতি এবং ঋত্বিক মাইতির মতো পড়ুয়ারা। দারিদ্রের কারণে যারা এক সময় পড়াশোনা ছেড়েছিল, তাদের অনেকেই ফিরেছে স্কুলে। প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক সময় স্কুলছুটের সমস্যা ছিল। কিন্তু বুক ব্যাঙ্ক এবং মিড ডে মিলের ফলে স্কুলছুট এখন ৩০ শতাংশ কমেছে।’’
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান পার্বতী পাত্রের কথায়, ‘‘তফসিলি এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার মানুষের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। সেই প্রেক্ষিতে বুক ব্যাঙ্কের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’ হলদিয়া মহকুমার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক রুদ্রনারায়ণ দোলইও মানছেন, ‘‘বুক ব্যাঙ্কের মাধ্যমে জয়নগরের গরিব এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা অনেকটা সাহায্য পাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy