এ ভাবেই চলে কেরোসিনের অবৈধ কারবার। নিজস্ব চিত্র
মোটরসাইকেলের দু’দিকে বাঁধা বড় জ্যারিকেন। সকাল হলেই এমন মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে গৃহস্থের দোরে হাজির হচ্ছেন কয়েকজন যুবক। জেনে নিচ্ছেন, বাড়িতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেরোসিন আছে কী? গৃহস্থ ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেই হল। চোঙ বার করে শুরু হয় মাপজোক। গৃহস্থের ড্রাম থেকে নীল রঙের কেরোসিন চালান হয় জ্যারিকেনে।
চন্দ্রকোনা রোডের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হামেশাই দেখা যাচ্ছে এই ছবি। অভিযোগ, রেশনে পাওয়া কেরোসিন নিয়ে শুরু হয়েছে কালোবাজারি। ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশও। বুধবারই, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ চন্দ্রকোনা রোডের একটি এলাকা থেকে নীল কেরোসিন পাচার চক্রের ২ জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। কিন্তু এ তো একটা মাত্র উদাহরণ। এমন অভিযান কি আরও চলবে?জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘এই কারবার বন্ধ করতে পুলিশি অভিযান শুরু করেছি। ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরকম অভিযান আরও চলবে।’’
কীভাবে চলছে এই কালোবাজারি? স্থানীয় সূত্রের খবর, রেশনে নীল রঙের কেরোসিন বিক্রি হয় প্রতি লিটার ২৭-২৮ টাকা দরে। কালোবাজারিদের হয়ে কাজ করেন বহু যুবক। তাঁরাই সকালবেলা জ্যারিকেন নিয়ে হাজির হচ্ছেন গৃহস্থের কাছে। লিটার প্রতি ৩০-৩৫টা দরে তেল কিনছেন তাঁরা।
সংগৃহীত সেই কেরোসিন কালোবাজারিরা কখনও বিক্রি করে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। আবার কখনও ড্রাম ড্রাম কেরোসিন পাচার করে দেওয়া হয় পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী সহ আশেপাশের জেলাগুলিতে। খোলা বাজারে নীল রঙের তেল বিক্রি হয় লিটার প্রতি ৪৫-৪৮টাকা দরে।
গড়বেতার খড়কুশমা, সন্ধিপুর, উত্তরবিল, চন্দ্রকোনা রোডের ডাবচা, নবকলা, রাঙামাটি, গুইয়াদহ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনের পর দিন চলছে এই কালোবাজারি। খড়কুশমা ও ডাবচার কয়েকজন কারবারি বলেন, ‘‘গৃহস্থের বাড়ি থেকে ৩২-৩৫ টাকা লিটার দরে কেরোসিন কিনে বড়বড় ড্রাম ভর্তি করা হয়। ড্রাম ভর্তি সেই সংগৃহীত কেরোসিন ৪৫-৪৮ টাকা লিটার দরে একশ্রেণির দালাল তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়।’’
কালোবাজারির অন্য উপায়ও রয়েছে। নীল রঙের কেরোসিনে মেশানো হয় এক ধরনের রাসায়নিক। এরপর নিমেষেই ভোলবদল। নীল কেরোসিন হয় যায় সাদা। বাজারে সাদা কেরোসিনের চাহিদা বেশি। লিটার প্রতি ৫৫-৬০টাকা দরে বিকোয় সেই সাদা কেরোসিন।
বাজার থেকে কারা কেনে এই কেরোসিন? বড়বড় নদীতে চলা ভুটভুটি, ট্রলারের মালিকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করা হয় এই নীল কেরোসিন। এছাড়া পরিবহণ মালিকদের কাছেও বেশি দামে বিক্রি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, চন্দ্রকোনা রোড থেকে ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে এর সঙ্গে বড় কোনও চক্র জড়িত কি না।
দুধওয়ালাদের মতোই সকাল হতে না হতেই দোরে দোরে হাজির হচ্ছেন কয়েকজন যুবক। প্রকাশ্যে চলছে মাপজোক। নীল তেল পাচার হচ্ছে অন্য জেলায়। সবই কি পুলিশের নজর এড়িয়ে! থাকছে প্রশ্ন। কারণ, পুলিশের অভিযান যে হয় কালেভদ্রে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy