Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
চাপানউতোর বাকচায়

বিজেপি বলে খুন, থানায় নিহতের স্ত্রী

ময়নার বাকচায় নিহত শঙ্কর মণ্ডলের স্ত্রী অবশ্য পুলিশের কাছে লিখিত ভাবেই জানালেন, তাঁর স্বামী আগে তৃণমূল করলেও সম্প্রতি বিজেপিতে এসেছিলেন। তাই তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে বলেও লিখিত অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন শঙ্করের স্ত্রী জবা মণ্ডল।

অভিযোগপত্র। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগপত্র। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়না শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

ভেড়িতে মৃতদেহটি পাওয়া যাওয়ার পরে তৃণমূল-বিজেপি দু’দলই বছর চল্লিশের যুবকটিকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছিল। পরস্পরের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছিল যুযুধান দুই দল। ময়নার বাকচায় নিহত শঙ্কর মণ্ডলের স্ত্রী অবশ্য পুলিশের কাছে লিখিত ভাবেই জানালেন, তাঁর স্বামী আগে তৃণমূল করলেও সম্প্রতি বিজেপিতে এসেছিলেন। তাই তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে বলেও লিখিত অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন শঙ্করের স্ত্রী জবা মণ্ডল।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই উত্তপ্ত পূর্ব মেদিনীপুরের এই এলাকা। গোড়ায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই বাধলেও পরে বিক্ষুব্ধ নেতা মিলন ভৌমিক বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এখন বাকচায় যুযুধান তৃণমূল ও বিজেপি। এলাকা দখল ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষও বাধছে। গত শনিবার রাত থেকে ফের গোলমাল মাধে। বাকচা ও গোড়ামহল গ্রামে দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বোমাবাজি চলে। এই গোলমালের মধ্যেই শনিবার রাতে নিখোঁজ হয়ে যান গোড়ামহল গ্রামের শঙ্কর। রবিবার সকালে বাড়ি থেকে কিছু দূরে নিজের মাছের ভেড়িতেই তাঁর মৃতদেহ মেলে। শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। স্থানীয় বিজেপি ও তৃণমূল নেতৃত্ব শঙ্করকে দলের কর্মী দাবি করে পরস্পরের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলেন। আর জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়, মদ্যপানেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের।

শঙ্করের স্ত্রী জবা মণ্ডল সোমবার সকালে ময়না থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন, শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ ফোন করে শঙ্করকে স্থানীয় বাকচা ডিআরসি ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে রাতে আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। রাতে খোঁজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি তাঁকে। রবিবার সকালে বাড়ির কাছেই পুকুরের জলে তাঁর দেহ মেলে। জবার আরও দাবি, ‘‘শঙ্কর আগে তৃণমূল করলেও এখন বিজেপি করতেন। তাই তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে।’’ তবে খুনের অভিযোগে কারও নামোল্লেখ করেননি জবা। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিবার শঙ্করের মৃতদেহ তমলুক জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে রাত ৮টা নাগাদ গোড়ামহল গ্রামে নিয়ে যান পরিজনেরা। তবে সেই রাতে তাঁর মৃতদেহ সৎকার করা হয়নি। স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা শঙ্করকে খুনের অভিযোগ তুলে ঘটনায় জড়িত তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতারের দাবি তোলেন। এ দিন সকালে শঙ্করের স্ত্রী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ময়না থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানা চত্বরেই কয়েকজন তৃণমূল কর্মী তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ও হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন জবাব। তারপরে গ্রামে শঙ্করের দেহ সৎকার শুরু হয়। বিজেপি’র ময়না দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি অলোক বেরার অভিযোগ, ‘‘হুমকি উপেক্ষা করেই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনাতেই প্রমাণ হয় শঙ্করকে তৃণমূলের লোকেরাই খুন করেছে।’’

তৃণমূলের অবশ্য দাবি, এ ক্ষেত্রে চাপ দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের ময়না ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার এ দিন বলেন, ‘‘শঙ্কর তৃণমূলের কর্মী। তাঁর মৃত্যুর তদন্ত পুলিশ করছে। কিন্তু বিজেপি’র কর্মীরা তাঁর দেহ আটকে রেখে চাপ তৈরি করে স্ত্রীকে দিয়ে এমন অভিযোগ লিখিয়ে নিয়েছে। আর আমরা থানায় গেলেও জবাদেবীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল জানিয়েছেম, এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder BJP Police TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE