প্রতীকী ছবি।
বাতাসে শিউলির গন্ধ। চারপাশে পেঁজা পেঁজা সাদা তুলোর মতো কাশের সমারোহ জানান দিচ্ছে দেবী আসছেন। পুজোর আনন্দ, গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। পুজোর ক’দিন কী পরবেন, কী খাবে, কোথায় কোথায় ঠাকুর দেখবেন তা নিয়ে ভাবনাতেই মশগুল সকলে। কিন্তু এ সবের কোনও ছাপ পড়ে না ওঁদের বিষণ্ণ মনে। পুজোর কটা দিন ওঁদের কাটে একদা পরিবারের সকলের সঙ্গে পুজোর কাটানোর স্মৃতি রোমন্থন করে।
ওঁরা মানে কাঁথির ফরিদপুর বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকেরা। কাঁথির সমুদ্র উপকণ্ঠে আলাদারপুটে এই বৃদ্ধাশ্রমে ৩০ জনের মতো আবাসিক থাকেন। এঁদের অনেকের বাড়িতেই এক সময় ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হত। বছরের এই সময়টায় চরম ব্যস্ততায় থাকতেন তারা। ঘরদোর পরিষ্কার, আত্মীয় আপ্যায়নের ব্যবস্থা থেকে দেবীর পুজোর জোগাড় সবতেই দশভুজা তাঁরা। কিন্তু এখন সেই হাত হাতড়ে বেড়ায় অতীতের সে সব আনন্দমুখর সোনালি দিনের স্মৃতি। এক সময় যাঁরা দশহাতকে সংসার সামলেছেন, এখন তাঁদের সময় কাটে বৃদ্ধাবাসের জানালার রেলিং ধরে দূরে শরতের নীল আকাশে চোখ রেখে। স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে যে চোখ ক্রমশ ঝাপসা হয়ে ওঠে।
পুষ্পরানির (নাম পরিবর্তিত) কথায়, ‘‘পুরনো সেই দিনের কথা সব এখন খুব মনে পড়ে। পুজো এলেই বাড়িতে সে কি হইচই। নানা কাজে দম ফেলার ফুরসত থাকত না। আর এখন চুপচাপ বসে থেকে সেই সব কথা মনে ভেবে সান্ত্বনা পাই।’’ রেডিয়োতে ‘যা দেবী সবর্ভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা... শুনে নস্টালজিক হয়ে পড়েন গৌরীবালা, খুকু দেবী, পার্বতী দেবীর মতো আবাসিকরা। জানান, মন খারাপ করতে পরস্পরের সঙ্গে ফেলে আসা অতীতের সে সেব দিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনায় ডুব দেন তাঁরা। কারও সময় কাটে টিভিতে পুজো দেখে। কেউ কেউ অবশ্য বাড়ির দুর্গাপুজোয় বৃদ্ধাশ্রম ছেড়ে ফিরে যান নিজের বাড়িতে। কারও আবার বৃদ্ধাশ্রমে সময় কাটে সেলাই মেশিন চালিয়ে কিংবা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে। তবে পরিবারের সঙ্গে আর ঠাকুর দেখার সুযোগ না থকলেও ষষ্ঠী থেকে সবাইকে একসঙ্গে গাড়িতে করে প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করেন বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। আশ্রমের তরফে ব্রজগোপাল মাইতি বলেন, ‘‘পুজো এলেই মানুষগুলো যেন আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। সেই নিঃসঙ্গতা কাটাতেই সকলকে নিয়ে পুজোর আনন্দ ইউপভোগ করতেই এই আয়োজন।’’
কিন্তু এই ক’দিনের রোশনাই কি পরিবার-স্বজন থেকে দূরে থাকা নিঃসঙ্গ এই মানুষগুলোর মনকে আলোয় ভরিয়ে দিতে পারে? উত্তরটা অবশ্য তাঁরাই দিতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy