মারধরের পরে দু’চোখে অ্যাসিড দিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার দুপুরেই সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে ঘাটাল আদালত। দাসপুরের সৈয়দ আলি হোসেনের উপর সেই অ্যাসিড হামলার রায় ঘিরে চর্চা থিতোতে না থিতোতেই ফের অ্যাসিড হানা ঘাটাল মহকুমারই চন্দ্রকোনার গ্রামে। এ বার আক্রান্ত বছর পঁচিশের এক বধূ।
চন্দ্রকোনার ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে। মহিলার অভিযোগ, বধূ নির্যাতনের মামলা তুলে নিতে চাপ দিলেও তিনি রাজি হননি। তাই স্বামী ও ভাসুর অ্যাসিডকে হাতিয়ার করেছে। অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে ওই মহিলার দুই হাতের বেশ খানিকটা অংশ। রামজীবনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়েছে তাঁর। শুক্রবার রাতেই জখম মহিলা তাঁর স্বামী আবু হেনা খান এবং ভাসুর আবু মুসা খানের বিরুদ্ধে চন্দ্রকোনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। শনিবার পুলিশ দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
স্ত্রীকে লক্ষ করে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। কিছুদিন আগে গাইঘাটায় মধ্যবয়সী এক মহিলার মুখ অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল তাঁর স্বামী। জয়নগরের তরুণী মনীষা পৈলানের মুখও অ্যাসিডে পুড়িয়ে দিয়েছিল প্রাক্তন স্বামী। চন্দ্রকোনায় জখম মহিলার সঙ্গেও স্বামীর অশান্তি চলছিল। দশ বছর ধরে বিবাহিত ওই দম্পতির দুই মেয়ে রয়েছে। বধূর অভিযোগ, অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বছর তিনেক আগে থেকে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। নির্যাতন চলতে থাকে ওই বধূর উপর। শেষে গত বছর অক্টোবরে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির আট সদস্যদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন ওই মহিলা। তারপর থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে চন্দ্রকোনারই অন্য একটি গ্রামে বাপের বাড়িতে রয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে সাইকেলে গ্রামের ব্যাঙ্ক থেকে ফিরছিলেন ওই বধূ। হঠাৎ মোটরবাইকে এসে তাঁর পথ আটকান স্বামী ও ভাসুর। ওই মহিলার কথায়, ‘‘আমার বর বাইকে বসেছিল আর অ্যাসিডের বোতল ছিল ভাসুরের হাতে। ভাসুর বলল, ‘মামলা তো তুলবি না। তাই তোকে মেরে দিলেই মামলা শেষ।’ আর তারপরই অ্যাসিড ছুড়ল।’’ মহিলার দাদা রিজাউল খানের আক্ষেপ, ‘‘বোনকে কখনও একা ছাড়ি না। কিন্তু শুক্রবার আলু তোলার কাজে ব্যস্ত থাকায় ওকে একা ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছিলাম। তখনই এই কাণ্ড।”
ঘাটাল মহকুমায় অ্যাসিড হামলার ঘটনা নতুন নয়। কখনও প্রেমের সম্পর্কে নারাজ তরুণীর গা ঝলসে গিয়েছে অ্যাসিডে, কখনও আবার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে অ্যাসিড হানার শিকার হয়েছেন মহিলা। দাসপুরের যে ঘটনায় শুক্রবার সাত অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, তার মূলে আবার ছিল সালিশি নিয়ে গোলমাল। প্রতি ঘটনার পরই খোলা বাজারে অ্যাসিডের সহজলভ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেখা গিয়েছে, ঘাটাল, দাসপুরে সোনার কাজ হওয়ায় অ্যাসিড এখানে সহজে মেলে। অ্যাসিড বিক্রি ও মজুতের ক্ষেত্রে নিয়মও মানা হয় না। এ ক্ষেত্রে নজরদারির ফাঁক রয়েছে বলেই অভিযোগ। যদিও ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধান বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে যাতে অ্যাসিড বিক্রি হয়, সে জন্য নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।”
তবে চন্দ্রকোনায় জখম মহিলার স্বামী ও ভাসুর পেশায় চাষি। ফলে, তাদের হাতে অ্যাসিড কী ভাবে এল তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর জখম মহিলার অ্যাসিড-ক্ষতের থেকে মনের ক্ষত আরও দগদগে। তিনি বলছেন, ‘‘সংসারে অশান্তি ছিল। মেয়েদের নিয়ে তো আলাদাই ছিলাম। তারপরও যে স্বামী-ভাসুর এ ভাবে অ্যাসিড ছুড়বে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy