দুমড়েমুচড়ে যাওয়া সেই গাড়ি। শুক্রবার দেউলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
গাড়ি ভাড়া করে সপরিবারে রওনা হয়েছিলেন পুরীর উদ্দেশ্যে। কিন্তু মাঝ পথেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল নাবালিকা মেয়ের। গুরুতর হয়েছেন কলকাতার ওই দম্পতিও। শুক্রবার সকালের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কোলঘাটের দেউলিয়া বাজার এলাকা। আগুন লাগানো হয় লরিতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৮টায় দেউলিয়া বাস স্ট্যান্ডে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে গার্ডরেল দিয়ে পথচারীদের পারাপার করাচ্ছিল ট্রাফিক পুলিশ। সে জন্য হলদিয়া-ঝাড়গ্রাম রুটের একটি বাসকে দাঁড় করানো হয়েছিল। তার পিছনেই দাঁড়িয়েছিল কলকাতার ওই দম্পতির ভাড়া করা গাড়িটি। হঠাৎ একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে। ছোট গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে সামনে দাঁড়ানো বাসের নীচে ঢুকে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লরির গতি এতটাই ছিল যে, সেটি গাড়িকে ধাক্কা মেরে থেমে যায়নি। বাসটিতেও ধাক্কা মারে সেটি। তার জেরে বাসটি রাস্তার পাশের ডিভাইডারে ধাক্কা মারে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই গাড়িতে থাকা নাবালিকা তানিশা মুখোপাধ্যায়ের (১২)। গুরুতর আহতন হন অন্য দুই আরোহী চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী মৌমিতা মুখোপাধ্যায় এবং গাড়ির চালক অজয়কুমার সাহু। চন্দ্রশেখরেরা কলকাতার মুকুন্দপুরের বাসিন্দা। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত হয়েছেন ঝাড়গ্রামগামী বাসটির চালকও। তাঁর পা ভেঙে গিয়েছে।অজয় বলেন, ‘‘পুরী যাচ্ছিলাম। দেউলিয়া বাজারে একটি বাসের পিছনে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপর আর কিছু জানি না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আহতদের উদ্ধার প্রসঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, কোলাঘাট থানার ল্যান্ডলাইন নম্বরে ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি। অগত্যা উদ্ধারে নামেন স্থানীয় টোটো এবং ভ্যান চালকেরা। কিন্তু গাড়িটি বাসের নীচে এমন দুমড়ে মুচড়ে ঢুকে গিয়েছিল যে, মৃত এবং আহতদের উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয়। শেষে বাসের ছাদে দড়ি বেঁধে সেটি উল্টে দেওয়া হয়। তার পরে উদ্ধার করা হয় চন্দ্রশেখরদের। কিন্তু ততক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে আধ ঘণ্টা। এরপর কোলাঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আহতদের নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্সেরও ব্যাবস্থা করতে পারেনি। এর পরেই পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়েরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় লরিটিতে। মারধর করা হয় এক পুলিশকর্মীকেও।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পাঁশকুড়া থানা এবং কোলাঘাট বিট হাউস থানার পুলিশ সেখানে যায়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে লরির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উভয় দিকে তৈরি হয়েছে যানজট। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
পুলিশ অবশ্য দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তমলুকের সার্কেল ইনস্পেক্টর স্বরূপ বসাক বলেন, ‘‘পুলিশ দুর্ঘটনার খবর পেয়েই রওনা দিয়েছিল। পুলিশের দোষ নেই। যারা পুলিশকে মারধর করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’
এ দিনের দুর্ঘটনার পরে দেউলিয়া বাজারের ওপর আন্ডারপাস তৈরির দাবি ফের জোরাল হয়েছে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, সকালে ফুল বাজারের ভিড় সামাল দিতে পুলিশ রাস্তায় গার্ডরেল দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। আন্ডারপাস থাকলে এ ধরনের আর সমস্যায় হবে না। এ নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক সুব্রত নাগ বলেন, ‘‘জমি সংক্রান্ত সমস্যা কেটেছে। কিন্তু জমির মালিকদের রাজ্য এখনও ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy