Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

জীবন সাগরে লড়াকু সাগরিকা আজ ‘বাংলার গৌরব’

শৈশবে টাইফয়েড কেড়ে নিয়েছিল বাক শক্তি ও শ্রবণ ক্ষমতা। তবে শরীরী বাধা তাঁকে থামিয়ে দেয়নি। এগারো বছর আগে স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সের সাঁতারে সোনা ও রুপোর পদক ছিনিয়ে এনেছিলেন তিনি।

মায়ের সঙ্গে সাগরিকা। ফাইল চিত্র

মায়ের সঙ্গে সাগরিকা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সবং শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২০
Share: Save:

শৈশবে টাইফয়েড কেড়ে নিয়েছিল বাক শক্তি ও শ্রবণ ক্ষমতা। তবে শরীরী বাধা তাঁকে থামিয়ে দেয়নি। এগারো বছর আগে স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সের সাঁতারে সোনা ও রুপোর পদক ছিনিয়ে এনেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য অনটনের সঙ্গে লড়াই ক্রমশ দীর্ঘ হয়েছে। সাঁতারের সোনার মেয়ে এখন মায়ের সঙ্গে মাদুর বুনে সংসার চালান। সবংয়ের শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মূক-বধির সেই সাগরিকা হাজরাই এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ‘বাংলার গৌরব’ সম্মান পেতে চলেছেন।

আজ, সোমবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোরে যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া বিভাগের ‘খেলাশ্রী’ প্রকল্পের অধীনে সাঁতার বিভাগে এই সম্মান পেতে চলেছেন সাগরিকা। এই সংক্রান্ত চিঠি বিডিও-র কাছে এসে পৌঁছেছে। চিঠি পেয়েছে সাগরিকার পরিবারও। আর তাতেই আশার আলো ঢুকেছে আঁধার ধরে। সাগরিকার মা দুর্গা হাজরা বলেন, “এত বছর পরে সরকার আমাদের দিকে মুখে তুলে চেয়েছে। খুবই খুশি আমরা। কিন্তু আমাদের অবর্তমানে মেয়ের কী হবে এটাই বড় ভাবনা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মেয়ের ভবিষ্যতের বন্দোবস্তের আর্জি জানাব।” এ প্রসঙ্গে বিডিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সাগরিকা হাজরা বাংলার গৌরব সম্মানের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হাতে আগামী ২৮জানুয়ারি ওই সম্মান তুলে দেবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেই সাগরিকাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে।”

গ্রামের পুকুরে সাঁতার শুরু সাগরিকার। একসময়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার রামকৃষ্ণায়ন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবন্ধী স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। সাঁতারের ঝোঁক দেখে স্কুলের সুইমিং পুলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন শিক্ষকেরা। কলকাতার প্রশিক্ষকেরা নিয়মিত অনুশীলন করাতেন সাগরিকাকে। ২০০৭সালে চিনের সাংহাইয়ে ‘স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সে’ যোগ দেন সাগরিকা। সাঁতারে মেলে একটি সোনা ও একটি রুপো।

সেই সাফল্যের পরে সাগরিকার গ্রামের বাড়ির সামনের মোরাম রাস্তায় এসেছিল বহু গাড়ি। বয়ে গিয়েছিল প্রতিশ্রুতির বন্যা। কিন্তু কিছুই হয়নি। সাগরিকার বাবা ওড়িশায় মাদুর ফেরি করেন। মায়ের সঙ্গে রান্নাবান্না সামলে মাদুর বোনেন সাগরিকা। দীর্ঘদিন ধরে সাগরিকার জন্য লড়ছেন স্থানীয় শিক্ষক অরিজিৎ দাস অধিকারী। তিনি বলেন, “এক প্রতিবন্ধী অলিম্পিকজয়ীর এমন অবস্থা হবে কেন? ও তো আমাদের সবং তথা জেলাবাসীর গর্ব। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর নজর পড়েছে। সাফল্যের দিকে একধাপ এগোলাম বলে মনে হচ্ছে।”

সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা আইএসআই-এর বিজ্ঞানী সমরেন্দ্র বারিক সাগরিকার কথা জানতে পেরেছেন। সমরেন্দ্রবাবুর কথায়, “এমন মেয়ে তো দেশের প্রেরণা। ওঁর নিরাপদ রোজগারের বন্দোবস্ত করাই এখন লক্ষ্য। আগামী ২৯ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাগরিকার ভাল করে পরিচয়ের জন্য সময় নিয়েছি।”

এগারো বছর পরে ফের আলোর রেখা ছাপ ফেলেছে সাগরিকার চোখেমুখেও। হাত নেড়ে বছর বত্রিশের যুবতী বুঝিয়ে দিয়েছেন, জয়ই তাঁর লক্ষ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Swimming Award Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE