কুখ্যাত তোলাবাজ বিশ্বজিত্ ভকত ওরফে বিশুকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই দাবি করল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। খুনের ঘটনায় ধৃত চার জনকে জেরা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে বলেও পুলিশের দাবি। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “সুপারি কিলার দিয়েই গোপীবল্লভপুরের ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপীবল্লভপুরের ‘ত্রাস’ বিশুকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ওড়িশার হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের ফোঁকো এলাকা থেকে একটি গাড়ি সমেত তিন ভাড়াটে খুনি সুমন সিংহ ওরফে মোটা রাজা, শেখ আক্রম হোসেন, তিলক কুমার এবং গাড়ির চালক শুভ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে দু’টি .৯ এমএম পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই গাড়ি নিয়েই দুষ্কৃতীরা গোপীবল্লভপুরের শাসড়া চকে বিশুর উপর হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। সুমন ও আক্রমের বাড়ি মেদিনীপুরে। তিলক খড়্গপুরের বাসিন্দা। আর ভাড়ার গাড়ির চালক শুভর বাড়ি গোপীবল্লভপুরে। শনিবার সুমন, আক্রম ও তিলককে দশ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে ঝাড়গ্রাম আদালত। শুভর ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। তবে কেন বিশুকে খুন করা হয়েছে সে ব্যাপারে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ।
পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতেই বিশু ও তার দলবল মোটা টাকার বিনিময়ে ওড়িশা সীমানা লাগোয়া গোপীবল্লভপুর-হাতিবাড়ি রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো বেআইনি পণ্যবাহী লরি চালান করে দিত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও বিশুর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের অক্টোবরে অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত গোপীবল্লভপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেই বিশুকে দেখা গিয়েছিল। এমনকী স্থানীয় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি ও দলীয় কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীকে যে দাবিপত্র দিয়েছিলেন, তাতেও সই ছিল বিশুর। পুলিশ ও শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরে এলাকায় বিশুর দাপটও বেড়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশু এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, স্থানীয় থানাকেও পাত্তা দিতেন না। সম্প্রতি বেআইনি ভাবে আলুর গাড়ি সীমানা পেরিয়ে ওড়িশা পাঠানোর ক্ষেত্রেও বিশুকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়। আর এ জন্য বিশুর হাত ঘুরে মোটা অঙ্কের টাকা প্রভাবশালী শীর্ষ মহলের কাছে পৌঁছত বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, আলু পাচার নিয়ে গোষ্ঠীর বিবাদে জড়িয়েছিলেন বিশু। স্থানীয়দের অনুমান, তার জেরেই তাঁকে মরতে হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy