ভোটদানে সচেতনতা বাড়াতে তমলুকে লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠান।—নিজস্ব চিত্র।
“ভাই-ভগিনীদের বয়স যদি হয় আঠারো, দেশ গড়ার দায়িত্ব তাহাদেরও।” খোলা গলায় গান ধরেছেন বাউল।
ভোট দিতে কী কী লাগবে? লাগবে ভোটার কার্ড, ভোটের স্লিপ। আর তার না থাকলে আধার কার্ড, জব কার্ড বা পরিচয়পত্রই কাফি। এমন কথাই জানিয়ে দিচ্ছে বেণিপুতুল নাচের পুতুল।
ভোটারদের সচেতন করতে এবং ভোটদানে উৎসাহ বাড়াতে গ্রামীণ লোকশিল্পীদের দিয়ে এমনই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচার শুরু করল নির্বাচন কমিশন। সোমবার জেলা নির্বাচন দফতরের তরফে জেলা সদর তমলুক ছাড়াও হলদিয়া, কাঁথি ও এগরা মহকুমায় ভোটার সচেতনতা অভিযান শুরু হয়। ভোট সংক্রান্ত নানা বিষয় সুর দিয়ে গান বেঁধে গ্রামে-গঞ্জে প্রচারে নেমেছে বাউল, তরজাগান ও বেণীপুতুল নাচ-গানের শিল্পীরা। সোমবার তমলুকে জেলা শাসকের অফিস প্রাঙ্গণে ভোটার সচেতনতা দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইভিএম মেশিন-সহ একটি ট্যাবলোর উদ্বোধন করেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। তিনি বলেন, “জেলার যে সব এলাকায় ভোট প্রদানের হার কম, সেই এলাকাগুলির ভোটারদের সচেতন করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন অনুষ্ঠানে বাউলগান করতে এসেছিলেন পাঁশকুড়ার হাউর এলাকার বাউল শিল্পী সুবল মাজী ও সহ-শিল্পীরা। প্রায় ৩০ বছর ধরে বাউল গান করছেন সুবলবাবু। তিনি বলেন, “গ্রামে লালনগীতি, রামায়ণ, মনসা বন্দনার গান করি। বেশ কয়েক বছর হল স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পালস পোলিও, এডস্ সচেতনতা নিয়েও গান করছি। তবে ভোটারদের সচেতন করতে বাউল গানের ডাক এই প্রথম।” সুবলবাবু ছাড়াও এ দিন ভোটারদের সচেতনতা নিয়ে তরজা গান করেন মহিষাদলের তরজা শিল্পী দিপালী ভুঁইয়া আর দেবকুমার পাত্র। কাঁথির মুগবেড়িয়া এলাকার পদ্মতামলি গ্রামের বেণীপুতুল নাচের শিল্পী অরবিন্দ ঘোড়ই জাতীয় সঙ্গীত নাটক আকাদেমির তরফে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পুতুল নাচের অনুষ্ঠান করেন। অরবিন্দবাবু বলেন, “পুতুল নাচের মাধ্যমে ভোটারদের যে এভাবেও সচেতন করা যায়, জানতাম না। নির্বাচন কমিশনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।”
কাঁথি মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ দিন ভোটার সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হয়। কাঁথি মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বকুল গাছের নীচে বাউল গান আর পুতুল নাচের মধ্য দিয়ে ‘চলো ভোট দিই, দেশ গড়ি’ নামের এই অনুষ্ঠান হয়। কাঁথির মহকুমাশাসক সরিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “নিবার্চন কমিশনের সিদ্ধান্তে আজকের দিন ভোটার সচেতনতা দিবস হিসেবে সর্বত্র পালন করা হচ্ছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি দিনটি কাঁথিতে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়েছে। পোস্টার-ফেস্টুন লাগানো ছাড়াও পথে বেরোয় একটি ট্যাবলো। মহকুমাশাসক ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জয়ন্ত মল্লিক, সৈয়দ আহমেদ। এ দিন হলদিয়াতেও এই সচেতনতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের পর ট্যাবলো-সহ প্রচার গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে প্রচার শুরু করে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর বলেন, “ভোটদানের হার তুলনায় কম এমন কয়েকটি বুথ চিহ্নিত করে সেখানে প্রচারে জোর দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে নন্দীগ্রামের ১২টি বুথ, হলদিয়ার ৪টি ও মহিষাদলের বিধানসভা এলাকার ২টি বুথ।” এগরা মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে এ দিন পটাশপুর-১ ব্লকের অফিস প্রাঙ্গণে এই অনুষ্ঠান হয়। ছিলেন এগরা মহকুমার দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট চিত্রদীপ সেন ও স্বপনকুমার মাইতি, সহ-মহকুমা তথ্য আধিকারিক উৎপল পাল প্রমুখ।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তথ্য ও সাংস্কৃতিক আধিকারিক তপন তরফদার জানান, ভোটারদের সচেতন করতে গানের মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি বাসিন্দাদের ভোটদানে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ। আগামী ১২ মে অবধি জেলায় এই প্রচার চলবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক অজয় পাল বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরে গত বিধানসভা নির্বাচনে ৯১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। আরও বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে ভোটদানে উৎসাহ পান তাই আমাদের এই উদ্যোগ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy