Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নির্বিঘ্নে ভোট চায় প্রশাসন, তবু শঙ্কায় বিরোধীরা

শিয়রে নির্বাচন। শুরু হয়েছে ডান-বাম-সহ সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-কর্মিসভা। এই অবস্থায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস’, দলীয় কর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বাম-কংগ্রেস এবং বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানাতে চান। প্রশাসনের কাছে তাঁদের দাবি, অবাধ, রক্তপাতহীন ভোট করাতে হবে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৯
Share: Save:

শিয়রে নির্বাচন। শুরু হয়েছে ডান-বাম-সহ সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-কর্মিসভা। এই অবস্থায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস’, দলীয় কর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বাম-কংগ্রেস এবং বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানাতে চান। প্রশাসনের কাছে তাঁদের দাবি, অবাধ, রক্তপাতহীন ভোট করাতে হবে।

প্রশাসনের বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতে তারা তৎপর। জেলাশাসক গুলাম আনসারি বলেন, “শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ করছি। কোনও অশান্তি ছাড়াই নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হবে বলে আশা করছি।” বিরোধীদের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগ মানেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। তিনি বলেন, “আমরা সন্ত্রাস নয়, উন্নয়নের পক্ষে।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “সিপিএমই সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছিল। এখনও তা চালানোর চেষ্টা করছে।”

লোকসভার নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর ইতিমধ্যেই জেলায় ৯টি সংঘর্ষ হয়েছে। ৫টি ক্ষেত্রে সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। আর ৪টি ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে সিপিএম। ঘটনাগুলি ঘটেছে কেশপুর, আনন্দপুর, গড়বেতা, দাসপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকায়। উঠেছে বাড়ি ভাঙচুর, মারধর-সহ একাধিক অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত যে ৯টি অভিযোগ হয়েছে তাতে ১৩ জন জখম হয়েছেন। অভিযুক্তের সংখ্যা ১১৬ জন। তার মধ্যে পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিরা পলাতক।

সম্প্রতি কেশপুরে সংঘর্ষ হয়েছিল। বাড়ি ভাঙচুরও হয়। আতঙ্কে পুরুষরা ঘরছাড়া। সম্প্রতি সেখানে যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার, সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত-সহ বাম প্রতিনিধি দল। বিমানবাবু বলেন, “ওরা (তৃণমূল) আসলে ভয় পেয়েছে। তাই এমন সন্ত্রাস করছে।” আর প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া তথা ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাসের কারণে প্রার্থী দিতে পারিনি। অনেক জায়গাতেও প্রার্থী দিলেও প্রচার করা যায়নি। এ বার যাতে এ রকম না হয়, তা নির্বাচন কমিশনকে দেখতে বলব।”

ইতিমধ্যে, সন্ত্রাস ঠেকাতে নিয়মিত পুলিশি টহলের দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। দাবি মতো, কিছু কিছু এলাকায় টহল চালু হলেও সর্বত্রই তা করা যাচ্ছে না। কেন? পুলিশ সূত্রের খবর, টহলের জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ কর্মী নেই। অথচ, কেশপুর, দাসপুর, সবং, পিংলা, ডেবরা, নারায়ণগড়ের মতো এলাকা থেকে শাসকদলের তরফে ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তবে আমরা এখনও সে ভাবে জোরদার প্রচারে নামিনি। কিন্তু, প্রচারে নামলেই যে বাধার সম্মুখীন হতে হবে সেই আশঙ্কা রয়েছে।” এই প্রেক্ষিতে জেলায় নির্বিঘ্নে ভোট করতে ন্যূনতম ৬০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী প্রয়োজন বলে পুলিশ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছে।

এই অবস্থায়, প্রশাসন রক্তপাতহীন ভোটের আশ্বাস দিলেও তা আদৌ কতদূর সম্ভব, তা নিয়ে আশঙ্কায় বিরোধীরা।

তবে, জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন অভিযুক্তের সংখ্যা ২,৯৮৩। নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর আরও ২৯৪ জনের নামে এমন গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৪৪২ জনকে ধরেছে পুলিশ। ২৮৩৫ জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। নানা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার চলছে। এখন পর্যন্ত ১৬৬টি বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। আটক হয়েছে ৫০৪৪ লিটার অবৈধ মদও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE