মোট ভোটারের অর্ধেকেরও বেশি নতুন প্রজন্মের। তাঁদের ভোটে ওলটপালট হয়ে যেতে পারে পূর্ব পরিকল্পিত সব অঙ্কই। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুরের যুযুধান সব রাজনৈতিক দলই পাখির চোখ করেছে এই প্রজন্মের ভোটকে।
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মোট ভোটার ১৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬০৬ জন। এর মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি, ৫২ শতাংশই নতুন প্রজন্মের। যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৪০। এ বার এই ভোটাররা যে দলের দিকে ঝুঁকবেন, তাঁরাই ভোটের আসরে কিস্তিমাত করবেন। অবস্থা দেখে রাজনৈতিক দলগুলি প্রচারে নানা কৌশল নিয়েছে। যেমন, জনসংযোগের অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে উঠে এসেছে ফেসবুক, ট্যুইটার। পথে-প্রচারে গুরুত্ব দিয়ে উঠে আসছে নতুন প্রজন্মের চাহিদাপূরণের আশ্বাস। মন পেতে আরও বেশি করে কাজে লাগানো হচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলিকেও।
কেমন? কাঁথির বামপ্রার্থী তাপস সিংহ ইতিমধ্যেই ‘বন্ধু কাঁথি’ নামে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে ভোট-প্রচারে নেমেছেন। নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন তাঁদের সঙ্গে। ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। ভোট-প্রচারে গিয়েও এই প্রজন্মের সঙ্গে আলাদা ভাবে সময় কাটাচ্ছেন। তাপসবাবুর কথায়, “তৃণমূলের ৩৪ মাসের অপশাসনে রাজ্যের নবীন প্রজন্ম চূড়ান্ত ভাবে হতাশ। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকায় বহু যোগ্য ছেলে মেয়ে চাকরি পাচ্ছেন না। কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন।” তাঁর তোপ, “আর অযোগ্যরা নেতাদের সুপারিশে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাচ্ছেন।” পরিবর্তনের সরকার এই প্রজন্মকে হতাশ করেছে বলেও তাঁর অভিযোগ। তাপসবাবুর আশা এর প্রভাব অবশ্যই ভোট-ব্যালটে পড়বে।
নবীন প্রজন্ম তৃণমূলের পক্ষেই রয়েছে বলে মত কাঁথির প্রার্থী শিশির অধিকারীর। তাঁর যুক্তি, “সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনে রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ কোনও ভাবনা ছিল না। অথচ নতুন সরকার এসেই তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। যুবশ্রী, কন্যাশ্রী, আনন্দধারা-সহ নানা প্রকল্প চালু করেছে। পঞ্চায়েতস্তরে কৃষি, মৎস্যচাষে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।” তাঁর দাবি, দলের ওয়েবসাইট খুললেই বোঝা যাবে গত ৩৪ মাসে নবীন প্রজন্মের জন্য কত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ভোট-মরসুমে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা দু’বেলা দাপিয়ে করছেন তিনি।
যাদের নিয়ে এত কথা, কী ভাবছেন তাঁরা? কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের পড়ুয়া অমিত দাস, গায়ত্রী দলপতি, বাজকুল কলেজের রবীন মণ্ডল কিংবা মুগবেড়িয়া কলেজের সৌম্যদেব ষড়ঙ্গীদের মত, তরুণ প্রজন্ম এ বার তৃণমূলের পক্ষেই রায় দেবেন। তাঁদের কথায়, তৃণমূলের সরকার নানা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা নিয়েছে। তা বাস্তবায়িতও করেছে। ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলের তরুণতরুণীরা ব্যাপক ভাবে উপকৃত হয়েছেন। অমিতের কথায়, “প্রাথমিক-মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ থেকে বিভিন্ন সরকারি শূন্যপদে নিয়োগ, আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতা বৃদ্ধি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ, এমনকী সিভিক পুলিশ তৈরি করে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তৃণমূল সরকারের একটা বিশাল পদক্ষেপ। এর কোনওটাই ৩৪ বছরে হয়নি।”
একই মত জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি দীপক দাসের। তাঁর কথায়, “রাজ্যের উন্নয়ন ছাড়াও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসেবে শিশির অধিকারী এলাকার প্রভূত উন্নতি করেছেন। তাই এই প্রজন্ম তাঁকেই ভোট দেবেন।” তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেনের আশা, “আজকের প্রজন্ম অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন। তারা বুঝছেন মাত্র ৩৪ মাসেই তৃণমূল যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা কর্মসংস্কৃতির গতি আনতে পেরেছে। তাই বিপুল ভোটে জিতব আমরাই।”
তৃণমূল নয়, এই প্রজন্মের ভোট পাবে বামেরাই। এই মত কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের শোভনজ্যোতি পণ্ডা, রামনগর কলেজের শেখ সেলিম, আলাপন প্রামাণিক থেকে নন্দকুমার কলেজের ছাত্র প্রীতম গায়েনের। তাঁদের কথায়, “রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিশেষ করে রাজ্যজুড়ে নারী নির্যাতন, সারদা কেলেঙ্কারি আর টেট দুর্নীতিতে রাজ্যের তরুণরা বিভ্রান্ত। অনেক যোগ্য ছেলেমেয়ে যেমন চাকরি পাননি, তেমনি টাকা দিয়েও অনেকে বিফল হয়েছেন। শাসকদলের ভয়ে এঁরা প্রকাশ্যে কিছু না বলতে পারেনি। কিন্তু, ভোটে এর যথেষ্ট প্রভাব পড়বেই।”
এদের সঙ্গে সহমত ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক পরিতোষ পট্টনায়কেরও। তাঁর কথায়, “তরুণতরুণীরা শাসকদলের বিপক্ষেই ভোট দেবেন।” সিপিএমের উত্তর কাঁথির প্রাক্তন বিধায়ক ও প্রাক্তন কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী চক্রধর মেইকাপের কথায়, “সারদা কাণ্ডে টাকা লগ্নি করে সাধারণ মানুষ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এজেন্টদের কেউ আত্মঘাতী হয়েছেন, কেউবা এলাকা ছাড়া। এর প্রভাব ভোটে পড়বেই।”
কাঁথির কংগ্রেস প্রার্থী কুনাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা রাজ্যের অধিকাংশ প্রকল্পই কেন্দ্রীয় সরকারের এটা সাধারণ মানুষ জানেন। বিজেপি প্রার্থী কমলেন্দু পাহাড়ি ভরসা রাখছেন মোদী ঝড়ে। দুই প্রার্থীরই আশা, সব বুঝে নবীন প্রজন্ম তাদের দলকেই ভোট দেবেন।
তবে শেষমেষ কী হল, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৬ মে ফল প্রকাশ পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy