Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দশ বছরেও হয়নি বেলদার বাসস্ট্যান্ড, যাত্রীদের দুর্ভোগ

দশ বছরেও বেলদার বাসস্ট্যান্ডের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়নি। অর্ধসমাপ্ত বাসস্ট্যান্ডও ভগ্নপ্রায়। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রীদের বাসে ওঠা-নামা করতে হয়। দিনের ব্যস্ত সময়ে রাস্তাতেই বাস দাঁড়ানোয় যানজট তৈরি হয়। দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। বর্ষায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

অর্ধসমাপ্ত বেলদা বাসস্ট্যান্ড। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

অর্ধসমাপ্ত বেলদা বাসস্ট্যান্ড। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলদা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:২২
Share: Save:

দশ বছরেও বেলদার বাসস্ট্যান্ডের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়নি। অর্ধসমাপ্ত বাসস্ট্যান্ডও ভগ্নপ্রায়। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রীদের বাসে ওঠা-নামা করতে হয়। দিনের ব্যস্ত সময়ে রাস্তাতেই বাস দাঁড়ানোয় যানজট তৈরি হয়। দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। বর্ষায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

বেলদা আর কয়েকদিনের মধ্যেই পুরসভা হতে চলেছে। ক্রমে এই শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে। বেলদার উপর দিয়ে দিঘা, কাঁথি, সোনাকানিয়া, ঝাড়গ্রাম, দাঁতন রুটের প্রায় ২১০টি বাস যাতায়াত করে। যাত্রী তোলার জন্য বাসগুলি দীর্ঘক্ষণ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। বাস ধরার জন্য সঙ্কীর্ণ রাস্তার দু’পাশে যাত্রীরাও দাঁড়িয়ে থাকেন। ফলে যানজট তৈরি হয়।

মেদিনীপুরগামী বাস স্টপেজে সদ্য সাংসদ তহবিলের টাকায় একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় গড়ার কাজ চলছে। তবে দীঘাগামী স্টপেজে নেই কোনও যাত্রী প্রতীক্ষালয়ও। কাঁথি থেকে বেলদায় আসা এক বাসযাত্রী বিশ্বজিত্‌ মাইতি বলেন, “বাসস্ট্যান্ড না থাকায় অপেক্ষা করার মতো কোনও ছাউনি নেই। রোদে-বৃষ্টিতে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।” বাসের জন্য শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে একটি দোকানের ছাউনিতে দাঁড়িয়েছিলেন বাসযাত্রী রবি হেমব্রম ও তাঁর স্ত্রী সুজাতা হেমব্রম। তাঁদের কথায়, “ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। বাস ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি। বাচ্চাটার গরমে কষ্ট হচ্ছে। তাই এই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এখানে একটা প্রতীক্ষালয়-সহ বাসস্ট্যান্ড করা খুব প্রয়োজন।”

২০০৩ সালে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে রাজ্য পরিবহণ দফতরের অনুমোদন নিয়ে বেলদায় সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, সেই সময় বেলদার দেউলি মৌজায় কলকাতার এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত দুই একর জমি থেকে ৮৮ ডেসিমেল জমি নিয়ে সেখানে বাসস্ট্যান্ড করার সিদ্ধান্ত হয়। সমস্ত রাজনৈতিক দল, বাস মালিক সংগঠন, ব্যবসায়ী সমিতিকে নিয়ে এক বৈঠকও হয়। বৈঠকে কয়েকজন বাইপাসের ধারে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করার কথা বলে। পরে সবর্সম্মতিক্রমে ওই জমিতেই বাসস্ট্যান্ড তৈরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে ২০০৪ সালে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ করা ২০ লক্ষ টাকায় বাসস্ট্যান্ডের জমিতে মাটি ভরাট করে মোরাম ফেলার কাজ শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে পরিবহণ দফতর থেকে দু’দফায় আরও ৩৬ লক্ষ টাকা আসে। সেই টাকায় বাসস্ট্যান্ডের এলাকা পিচ করার কাজ হয়। পরে পঞ্চায়েত সমিতির দেওয়া ৬ লক্ষ টাকা ও ২০০৮-০৯ সালে রাজ্যসভার সদস্য তপন সেনের সাংসদ তহবিলের ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি কংক্রিটের সেতু, নর্দমা, পূর্ব দিকের আরও একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় গড়ার কাজ হয়। তবে পরিবহণ দফতরের বরাদ্দ অর্থের মধ্যে পড়ে থাকা ৬ লক্ষ ও সাংসদ তহবিলের খরচ না হওয়া টাকা নিয়ে মোট ১৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়নি।

কথা ছিল, ওই ১৮ লক্ষ টাকা দিয়ে বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতীক্ষালয়, জল ও বিদ্যুত্‌ সংযোগের কাজ হবে। কিন্তু ২০০৮ সালে থমকে যায় বাসস্ট্যান্ডের নির্মাণকাজ। পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের প্রাক্তন সভাপতি সমর সিংহ বলেন, “আমাদের সময়ে যথেষ্ট কাজ হয়েছিল। তবে পরে ঠিকাদার আর কাজ করেনি। তারা কেন কাজ করেনি, সে বিষয়ে তত্‌কালীন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গোপাল দে বলতে পারবেন।” তত্‌কালীন বেলদা পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা প্রস্তাবিত বাসস্ট্যান্ডের আহ্বায়ক গোপাল দে বলেন, “২০১০ সাল পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডের কাজ হয়েছে। কিন্তু তারপরে ঠিকাদারের কাজে তৃণমূল বাধা দেওয়ায় কাজ অসম্পূণর্র্ থেকে গিয়েছে।”

যদিও বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি গণেশ মাইতি বলেন, “কখনও বাসস্ট্যান্ডের কাজে বাধা দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রস্তাব ছিল, বাসস্ট্যান্ডটি রেল স্টেশন সংলগ্ন পূর্ত দফতরের বাংলোর কাছে করা হোক। কাজে হাত দিয়ে বিগত সিপিএম বোর্ডও সমস্যা বুঝতে পেরেছিল। তাই ওঁদের সদিচ্ছার অভাবেই কাজ এগোয়নি।” মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বেলদার বাসিন্দা বেণুবিনোদ মাইতি বলেন, “রাস্তা, জল, বিদ্যুত্‌-সহ উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়েই বাসস্ট্যান্ড চালু করতে হবে।” তবে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সনাতন মুর্মুর আশ্বাস, “আমরা আর সময় নষ্ট না করে পড়ে থাকা ১৮ লক্ষ টাকা দিয়ে আপাতত দেউলির অসমাপ্ত বাসস্ট্যান্ডের কাজ চালু করার চেষ্টা করছি। তার প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হবে।”

থমকে থাকা বাসস্ট্যান্ডের কাজ কবে ফের শুরু হয়, সেটাই দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

belda bus stand commuters problem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE