হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিংহ।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘ড্রিমগার্ল’ হেমা মালিনীকে ভোট-প্রচারে চাইছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। এ ছাড়াও ‘কালীচরণ’ শত্রুঘ্ন সিংহ ও ‘অমর’ বিনোদ খন্নাকেও জেলার প্রচারসভা গুলিতে হাজির করানোর জন্য দলের রাজ্য ও শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তদ্বির শুরু করেছেন জেলা নেতারা। জেলায় বিজেপির কোনও তারকা প্রার্থী নেই। উল্টে তৃণমূলের তারকা প্রার্থীরা প্রচারের হাওয়া কেড়ে নিচ্ছেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভপ্রকাশ করছেন বিজেপির দলীয় নেতা-কর্মীর একাংশ। মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী বাংলা ছবির এক সময়ের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। ঘাটালে বাংলার ‘হার্টথ্রব হিরো’ দেব ওরফে দীপক অধিকারী। আর ঝাড়গ্রামে ভূমিকন্যা চিকিৎসক উমা সরেন। এই ত্র্যহস্পর্শে কার্যত দিশেহারা বিজেপির কর্মীরা। জেলায় সে ভাবে দলের সংগঠন নেই, অথচ জেলার তিনটি আসনেই দলের রাজ্য স্তরের নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মেদিনীপুরে কর্মিসভা করে তৃণমূলের হাওয়া তুলে দিয়েছেন সন্ধ্যা রায় ও দেব। শনিবার থেকে দেব নিজের কেন্দ্রে প্রচার শুরু করবেন। ঝাড়গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী সদ্য ডাক্তারি পাস করা উমা সরেন একেবারেই অরাজনৈতিক নতুন মুখ। উমাদেবীও নিজের কেন্দ্র চষে বেড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রচারে চমক আনতে তিনটি কেন্দ্রে তারকা সমাবেশ করে জাতীয়স্তরে নতুন সরকার গড়ার স্বার্থে বিজেপি প্রার্থীদের জেতানোর আবেদন রাখার রাজনৈতিক কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা বিজেপির অন্দরের খবর।
বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলছেন, “কেন্দ্রে এ বার নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে সরকার তৈরি হতে চলেছে। বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও পুরসভা ভোটের থেকে লোকসভা ভোটের চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। জেলায় প্রচারে বরুণ গাঁধীকে আমরা পাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিংহ ও বিনোদ খন্নাকেও ভোট প্রচারে চাইছি। শত্রুঘ্ন তো আমাদের জেলায় প্রচার করতে আসার ব্যাপারে বেশ উৎসাহ দেখিয়েছেন।” তুষারবাবু মানছেন, তারকারা এলে কর্মীদের পাশাপাশি, ভোটাররাও উজ্জীবিত হবেন। জেলা বিজেপি সূত্রের দাবি, হেমা, শত্রুঘ্ন ও বিনোদ তিন জন তারকাই রাজনীতিতে পোড় খাওয়া। ফলে, সন্ধ্যা রায়, দেব ও উমা সরেনের চেয়ে মুম্বইয়ের অতীত দিনের এই তারকারা রাজনীতিতে অনেক বেশি পরিণত বলে মনে করছেন বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। হেমা, শত্রুঘ্ন ও বিনোদ এবার মথুরা, পটনাসাহিব ও গুরুদাসপুরে প্রার্থী হয়েছেন। তবে জেলায় ভোট হওয়ার আগেই এপ্রিল মাসের মধ্যে বিজেপির ওই তারকা প্রার্থীদের ওই তিনটি কেন্দ্রে ভোটপর্ব মিটে যাবে বলে জানিয়েছেন বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়। বিজেপি সূত্রের আরও দাবি, হেমা মালিনীর এখনও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই ‘ড্রিমগার্ল’কে প্রচারে আনার ব্যাপারে তোড়জোড় চলছে।
শত্রুঘ্ন আবার বাংলায় বক্তৃতাও দিতে পারেন। শত্রুঘ্ন অভিনীত ‘কালীচরণ’ কিংবা বিনোদ খন্না অভিনীত ‘অমর-আকবর-অ্যান্টনি’র মতো পুরনো দিনের হিন্দি ছবিগুলি নতুন প্রজন্মের কাছেও সমান জনপ্রিয়। ফলে, ভোটের বাজারে তারকাদের আনলে সুবিধা হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় বিজেপির নেতারা।
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের বিপক্ষে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন দলের রাজ্য সহ সভাপতি তথা কলকাতার বাসিন্দা প্রভাকর তিওয়ারি। ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী ‘ভূমিকন্যা’ উমা সরেনের বিপক্ষে বিজেপি’র আদিবাসী মোর্চার রাজ্য সভাপতি বিকাশ মুদিকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিকাশবাবুর বাড়ি বর্ধমানে। আর ঘাটালে তৃণমূল প্রার্থী দেব ওরফে দীপক অধিকারীর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির সংখ্যলঘু মোর্চার রাজ্য নেতা মহম্মদ আলম। উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটির বাসিন্দা আলম সাহেব পেশায় ব্যবসায়ী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সাংগঠনিক ভাবে বিজেপি’র দু’টি জেলা কমিটি রয়েছে। একটি পশ্চিম মেদিনীপুর, অন্যটি ঝাড়গ্রাম। তিন প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরই বিজেপির নিচু তলায় ক্ষোভ ছড়ায়। তৃণমূলের তিন প্রার্থীর তুলনায় বিজেপির প্রার্থীরা হেভিওয়েট নন, বলেই মনে করছে দলের একাংশ। কোন কোন তারকা প্রচারে আসবেন তা খোলসা করেননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর কথায়, “সময়েই সব জানতে পারবেন।”
দলের হেভিওয়েট তারকারাই এখন বিজেপির ভরসা! কারা আসেন সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy