প্রচারে এসে ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সামনে পড়লেন তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ এগরা হাইস্কুল মাঠে ছিল তৃণমূলের সভা। আর সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চের দখল নিয়েই গোষ্ঠী কোন্দল বাধল দলের কর্মীদের মধ্যে।
এগরা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তপনকান্তি কর এবং এগরা পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন নায়েক ও বিধায়ক সমরেশ দাস গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। দিন কয়েক আগেও এগরার দিঘা মোড়ে সন্ধ্যা রায়ের সভাকে কেন্দ্র করে হট্টনগর মন্দিরের সামনে এই দু’পক্ষই ঝামেলায় জড়িয়েছিল। এরপর বৃহস্পতিবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার?
আগামী ৭ মে মেদিনীপুরে লোকসভা নির্বাচনের দিন নির্ধারিত রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বৃহস্পতিবার এই এলাকায় সভা করার কথা ছিল সন্ধ্যাদেবীর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠান শুরুর আগে মঞ্চে উপস্থিত থাকা এগরা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তপনকান্তি কর, তাঁর গোষ্ঠীর জয়ন্ত সাউ নামে এক কর্মীকে মঞ্চে ডাকেন। তাতেই বাধ সাধেন এগরা পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন নায়েক গোষ্ঠীর কর্মীরা। সেই বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। এমনকী মঞ্চের সমস্ত চেয়ার ছুঁড়ে ফেলা হয়। মঞ্চের পাশে থাকা বিধায়ক সমরেশ দাস ঘটনার জেরে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যান। আর যখন এই ঘটনা ঘটছে, তখন ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই গাড়িতে বসে রয়েছেন প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। সঙ্গে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ-সহ দলীয় নেতৃত্ব।
মিনিট কুড়ি ধরে এই হাতাহাতি চলার পর দুই পক্ষে নেতাদের মধ্যস্থতায় অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন মঞ্চে ওঠেন সন্ধ্যাদেবী। এবং সামান্য কয়েকটি বক্তব্য রাখার পরই এলাকা ছাড়েন তিনি। এগরার বিধায়ক সমরেশ দাস বলেন, “আমি মঞ্চের কাছে যেতেই দেখি মঞ্চের দখল নিয়ে কয়েকজন হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছে। আসলে মুষ্টিমেয় কয়েকজন সিপিএম থেকে আমাদের দলে যোগ দিয়ে অকারণে ঝামেলা বাড়াচ্ছে।” ঘটনার কথা স্বীকার করে তপন কর বলেন, “জয়ন্ত সাউকে মঞ্চে ডাকা নিয়েই এ দিন সমস্যা হয়েছিল। তবে পরে আমরা পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলাম।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত পণ্ডা বলেন, “এমন দলের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত। জনগণই এর উত্তর দেবেন।”
মেদিনীপুরের দলীয় সভায় সন্ধ্যাদেবীকে প্রচারে কম সময় দেওয়ার জন্য কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আর এই ঘটনার জেরে সামনে এসেছিল দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এগরার দিঘা মোড়ে সন্ধ্যা রায়ের সভাকে কেন্দ্র করে হট্টনগর মন্দিরের সামনেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অনেকক্ষণ গাড়িতে আটকে থাকতে হয়েছিল সন্ধ্যাদেবীকে। আর বৃহস্পতিবারের ঘটনা দলের সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই আরও প্রকট করে তুলল। বারবার প্রার্থীর সামনে দলের এমন বেআব্রু চেহারা বাইরে আসায় স্বভাবতই অপ্রস্তুত জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, “ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এমনকী সভাও সুষ্ঠভাবে হয়েছে।” কোনও মন্তব্য করতে চাননি সন্ধ্যা রায়ও।
তবে এ দিনের সভায় মোতায়েন থাকা পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। দলের কর্মীদেরই অভিযোগ, হাতাহাতির সময় পুলিশ কর্মীরা তা থামানোর জন্য কিছুই করেনি। এগরা থানার ওসি মদনমোহন রায় বলেন, ‘‘আজ এলাকায় আটটি সভা ছিল। যখন মঞ্চে গণ্ডগোল হচ্ছিল তখন সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল না। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
পিছোল চার্জগঠন। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়া-সহ ৫৫ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন আরও পিছিয়ে গেল। মামলার চার্জগঠন সংক্রান্ত শুনানির জন্য অভিযুক্তদের আগামী ৩০ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে ওই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহু-সহ ৫৫ জন অভিযুক্তদের হাজির হওয়ার নির্দেশ থাকলেও ৬ জন অভিযুক্ত হাজির ছিলেন না। ওই ৬ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে জেলা ও দায়রা বিচারক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy