বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পরিকাঠামোর খামতি ঢাকতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআইয়ের পরিদর্শনের সময় শিক্ষক থেকে আসবাব, সবই ধার করে দেখানোটা এ রাজ্যের দস্তুর। তাতেও নানা সময়ে মেডিক্যালের আসন নিয়ে টানাপড়েন চলে।
এ বার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে নানান পরিকাঠামোর অভাবের ফাঁসে পড়েছে প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর (নদিয়া) ক্যাম্পাস। পরিকাঠামো না-থাকার অভিযোগ তুলে সেখানে পশুচিকিৎসা বিজ্ঞানের স্নাতক স্তরে ছাত্র ভর্তির অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ভেটেরিনারি কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা ভিসিআই। দিল্লিতে ভিসিআইয়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন পড়ুয়ারা।
বিভিএসসি (ব্যাচেলার অব ভেটেরিনারি সায়েন্স) কোর্সে আসন-সংখ্যা ৮০। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড পরিচালিত ই-ভেট পরীক্ষার মাধ্যমে এই পাঠ্যক্রমে পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হয়। কিছু দিনের মধ্যেই ওই পরীক্ষার ফল বেরোবে। কিন্তু ভিসিআই ছাত্র ভর্তির অনুমতি না-দিলে ই-ভেট উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা অথৈ জলে পড়বেন।
কী বলছে ভিসিআই?
ভিসিআইয়ের সভাপতি উমেশচন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের অনুমোদন না-নিয়ে যে-ভাবে বেলগাছিয়া থেকে মোহনপুর ক্যাম্পাসে স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের সরানো হয়েছে, তা অবৈধ। গত বছর ভিসিআইয়ের অনুমতি না-নিয়েই রাজ্য সরকার মোহনপুরে ছাত্র ভর্তি করেছে।
আমরা এর বিরোধিতা করছি। এখনও আমরা মোহনপুর ক্যাম্পাসের অনুমতি দিইনি।’’
ভিসিআই মোহনপুর ক্যাম্পাসে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন দিচ্ছে না কেন?
ভিসিআইয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য রবীন্দর চৌধুরীর জবাব, ‘‘একটি ভেটেরিনারি কলেজে যে-পরিকাঠামো দরকার, মোহনপুর ক্যাম্পাসে তা নেই।’’
ঠিক কী ধরনের পরিকাঠামো নেই মোহনপুর ক্যাম্পাসে?
ভিসিআই সূত্রের খবর: l মোহনপুরের জন্য আলাদা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করা হয়নি। বেলগাছিয়ার প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই কলকাতা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে মোহনপুরে ক্লাস নিতে যান। l হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পশু খুব কম আসে। তাই ছাত্রদের হাতেকলমে শিক্ষায় ঘাটতি থাকছে। l কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র নেই। l ইন্ডোর হাসপাতাল নেই। l শবব্যবচ্ছেদ কেন্দ্র নেই। l রোগ নির্ণয় কেন্দ্র নেই। l মোহনপুরে ছাত্রছাত্রীদের এক ভবন থেকে অন্য ভবনের ক্লাসে যেতে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে হয়। তাই অধিকাংশ পড়ুয়া সাইকেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। l মোহনপুরের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়াদের ইন্টার্নশিপের জন্য বেলগাছিয়ায় আসতে হচ্ছে।
কী বলছে প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়?
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘মোহনপুরে ক্যাম্পাস সরানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রককে আগেই জানানো হয়েছিল। ওখানে পঠনপাঠনের পরিকাঠামো আছে। পরিকাঠামোর অভাব সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। এ-সব রাজনৈতিক চক্রান্ত।’’
কারা চক্রান্ত করছেন?
উপাচার্যের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ কলকাতা ছেড়ে মোহনপুরে যেতে রাজি নন। তাই মোহনপুর ক্যাম্পাসে পড়াশোনা বন্ধ করার জন্য তাঁরা ভিসিআইয়ের সদস্য এবং মোহনপুরের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবশ্য উপাচার্যের অভিযোগ মানতে চাননি। এক শিক্ষক বলেন, ‘‘যুক্তিহীন মন্তব্য করছেন উপাচার্য। আসলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ছাড়া ওঁর আর কিছুই বলার নেই।’’ ওই শিক্ষকের প্রশ্ন, স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের মোহনপুরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ের পঠনপাঠন হচ্ছে বেলগাছিয়ায়। একই শিক্ষকের পক্ষে বেলগাছিয়া ও মোহনপুরে ক্লাস নেওয়া কী
ভাবে সম্ভব?
শুধু শিক্ষকেরা নয়, এ ভাবে মোহনপুরে ক্যাম্পাস সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় পড়ুয়ারাও ক্ষুব্ধ। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রেজা শামিম বলেন, ‘‘মোহনপুর ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা অনেক। ভিসিআইয়ের অনুমোদন না-মিললে আগামী বছর স্নাতক-উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy