এলেন, ধরা পড়লেন, ছাড়া পেলেন!
তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের তদন্তে শুক্রবারই স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হলেন ম্যাথু স্যামুয়েল। সেই আটক আবার কলকাতা পুলিশেরই লুক আউট নোটিসের ভিত্তিতে! রাতেই অবশ্য ছাড়া পান ম্যাথু। তার আগে কয়েক ঘণ্টা টানটান নাটক চলে নারদ নিউজের সিইও-কে ঘিরে।
শনিবার সন্ধ্যায় দুবাই থেকে দিল্লি ফেরেন ম্যাথু। বিমানবন্দরে নামতেই অভিবাসন দফতর তাঁকে আটক করে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তারা ম্যাথুকে জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের লুক আউট নোটিস রয়েছে। ম্যাথুর দাবি, তিনি অভিবাসন দফতরকে হাইকোর্টের নির্দেশের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতা পুলিশ লুক আউট নোটিস এখনও তুলে নেয়নি— এই যুক্তি দেখিয়ে তাঁকে আটকে রাখা হয়।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ রাতে বলেন, ‘লুক আউট নোটিসের ভিত্তিতে ম্যাথুকে আটক করা হয়েছিল। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশের কথা জানিয়ে ওঁকে ছেড়ে দিতে বলেছি।’’ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ছাড়া পেয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যাথু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে দু’টো লুক আউট নোটিস
ছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার চুপিসারে তা জারি করেছিল।’’
হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও তাঁকে আটক করা হয়েছিল কেন? লালবাজারের কর্তাদের দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি তাঁরা হাতে পাননি। তাই লুক আউট নোটিস বহাল রাখা হয়েছিল। ম্যাথুকে আটকের খবর পেয়েই তাঁর আইনজীবী শামিম আহমেদ কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে একটি চিঠি দেন। তাতে আদালত অবমাননার কথা মনে করিয়ে হুঁশিয়ারি দেন, অবিলম্বে ম্যাথুকে ছেড়ে না দিলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। ম্যাথুর আর এক আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘সোমবার প্রধান বিচারপতির এজলাসে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরুর আর্জি জানাব।’’ তাঁর বক্তব্য, শুক্রবার এজলাসে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র হাজির ছিলেন। পুলিশকে নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠানো উচিত ছিল তাঁর। জয়ন্তবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি ‘আদালতের বিচারাধীন’ বলে মন্তব্য করতে চাননি। রাতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র টুইটারে লেখেন, ‘ম্যাথুকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে ঘুষ-কাণ্ড চাপা দেওয়া ও দোষীদের আড়ালের প্রয়াস চলছিল।’
বিধানসভা ভোটের আগে নারদের স্টিং ভিডিও-য় (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী-নেতাকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। ভোট মিটতেই রাজ্যের মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের (তাঁকেও ফুটেজে দেখা গিয়েছিল) স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় নিউ মার্কেট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই জালিয়াতি, অপরাধের ষড়যন্ত্র-সহ চারটি ধারায় মামলা রুজু করে নারদ কাণ্ডের তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। সেই তদন্তে একাধিক বার ম্যাথুকে তলব করেছিল লালবাজার। কিন্তু ম্যাথু হাজির হননি।
লালবাজার সূত্রের খবর, ম্যাথু যে দেশের বাইরে রয়েছেন, তা জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। সেই কারণেই বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাঁর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়েছিল। লালবাজারের খবর, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হুসেন মির্জা এবং তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের। ইকবালই তাঁকে বিভিন্ন নেতার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন দাবি করেছিলেন ম্যাথু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy