প্রতীকী ছবি।
ঢেলে সাজা হয়েছে পাঠ্যক্রম। নতুন পাঠ্যক্রম মেনে লেখা পাঠ্যবইয়ের অধিকাংশ অধ্যায়ে রয়েছে শুধু তথ্য। পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা নেই। তারই পরিণামে এ বছর মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের ফল খারাপ হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।
শিক্ষক মহলের দাবি, ভৌতবিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে ধারণাই স্পষ্ট হয়নি পড়ুয়াদের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী এই দুই বিজ্ঞান বিষয়ে ‘এএ’ অর্থাৎ ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের সংখ্যা এক ধাক্কায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। সংখ্যাটা কমেছে গণিতেও। সমস্যার কথা জেনে পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের আশ্বাস, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অবশ্য দায় ঝেড়ে ফেলেছে।
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, নতুন পাঠ্যক্রমে এ বছর প্রথম পরীক্ষা হয়েছে। পাঠ্যক্রম এবং নতুন ধাঁচের প্রশ্নপত্র সম্পর্কে পড়ুয়াদের ধাতস্থ করতে মডেল প্রশ্নপত্র প্রকাশ করেছিল পর্ষদ। কিন্তু গোড়াতেই গলদ থাকায় শেষ রক্ষা করা যায়নি বলেই দাবি শিক্ষকদের একাংশের। তাঁদের দাবি, ভৌতবিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞানের বিভিন্ন অধ্যায়ে শুধু তথ্যটুকু দিয়েই দায় সেরে ফেলা হয়েছে। সবিস্তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। পাতলা পাঠ্যবইয়ে সব কিছু লেখা সম্ভব নয় বলেও মত প্রকাশ করেছেন শিক্ষকদের একটা বড় অংশ।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক বিজয়রঞ্জন আচার্য জানান, দশম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ে আলো, তড়িৎ বিশ্লেষণ, রসায়নের গাণিতিক সমস্যা জায়গা পেয়েছে। কিন্তু তার বেশ কিছু অংশই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি থেকে নেওয়া হয়েছে। উপরন্তু এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের উপস্থাপনা তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে পরীক্ষার্থীরা। রসায়নের গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য যে-সব প্রশ্ন দেওয়া থাকে, সেগুলিতে সহজেই নম্বর পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর এমন ভাবে সেগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে যে, পড়ুয়ারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই তারা সেগুলি এড়িয়ে গিয়েছে। এই ধরনের বেশ কয়েকটি প্রশ্ন এড়াতে বাধ্য হওয়ায় নম্বর কম উঠেছে বলে বিজয়বাবুর দাবি। শুঁড়াকন্যা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা দেবযানী দত্তরায় রাখঢাক না-করে বলেন, ‘‘ভৌতবিজ্ঞানের পাঠ্যবই এতটাই দায়সারা ভাবে লেখা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি পড়ুয়াদের বোধগম্য হওয়া বেশ কঠিন।’’
প্রায় একই কথা বলেছেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা শম্পা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে, পাঠ্যবইয়ে শুধু তথ্য রয়েছে। যেটা অসম্পূর্ণ মনে হতে পারে পড়ুয়াদের। তবে এর জন্য শিক্ষকদের বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। আশা করি, পড়ুয়াদের সমস্যা মিটবে।’’ গণিতের শিক্ষিকা তথা পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা সান্ত্বনা রায়ের বক্তব্য, অঙ্কের পাঠ্যবই খুঁটিয়ে অনুশীলন করতে হবে। এমসিকিউ বেশি হওয়ায় অযথা সময় নষ্ট না-করে দ্রুত উত্তর লেখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। ‘‘পাঠ্যক্রম নতুন বলে পড়ুয়ারা কিছুটা হয়তো বিভ্রান্ত। আশা করি, এর পর থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে,’’ বলেছেন সান্ত্বনাদেবী।
এমসিকিউ প্রশ্ন থাকায় ইতিহাস, ভূগোলের মতো বিষয়ে বেশি নম্বর পেতে সুবিধা হয়েছে বলে শিক্ষকদের অভিমত। ‘‘এ বছর নতুন ধাঁচের প্রশ্নপত্রে ইতিহাসে ৩৬ এবং ভূগোলে অঙ্ক নিয়ে ৪৬ নম্বরের ছোট প্রশ্ন ছিল। সেই জন্য অনেক পড়ুয়া সেখানে ভাল নম্বর পেয়েছে। এ ছাড়া অন্য প্রশ্নেরও মান ছিল দুই অথবা তিন। ফলে এই বিষয়গুলিতে নম্বর বে়ড়েছে,’’ বলছেন হাওড়ার বুড়িখালি ক্ষেত্রমোহন ইনস্টিটিউশনের ভূগোলের শিক্ষিকা সুস্মিতা থান্দার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy