Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Arnab Dam

কাটল জট, জেল থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পিএইচডির ক্লাস শুরু করলেন মাওবাদী অর্ণব

বর্ধমান সংশোধনাগার থেকে মঙ্গলবার প্রিজ়ন ভ্যানে চেপে নির্ধারিত সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের ক্লাসে পৌঁছন অর্ণব। তাঁর জন্য কড়া নিরাপত্তা মোতায়েন করা ছিল।

image of arnab

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির ক্লাসে অর্ণব দাম। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৫:৪৪
Share: Save:

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে মঙ্গলবার থেকে শুরু হল পিএইচডির ক্লাস। সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে ক্লাস করলেন জেলবন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়কে জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের একটি চিঠি পাঠানোর পর অর্ণবের ক্লাস করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেই জট কেটেছে। তার পরেই মঙ্গলবার প্রথম ক্লাস করলেন অর্ণব।

বর্ধমান সংশোধনাগার থেকে মঙ্গলবার প্রিজ়ন ভ্যানে চেপে নির্ধারিত সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের ক্লাসে পৌঁছন অর্ণব। তাঁর জন্য কড়া নিরাপত্তা মোতায়েন করা ছিল। জেলবন্দি অর্ণব ক্লাস শুরু করায় খুশি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপকেরা। বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, ‘‘অর্ণব দামের পিএইচডিতে ভর্তি হওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কুণাল ঘোষ হস্তক্ষেপ করায় তা মিটে গিয়েছে। পাশাপাশি, উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কারামন্ত্রী অখিল গিরি উদ্যোগী হওয়ায় অর্ণব গবেষণার ক্লাস শুরু করতে পারলেন।’’ গবেষণার ক্ষেত্রে অর্ণবের গাইড কে হবেন, তা এখনও স্থির হয়নি। এ প্রসঙ্গে তানভীর বলেন, ‘‘এখন ছয় মাসের কোর্স ওয়ার্কের পর অর্ণবের গাইড কে হবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ছ’মাস পর একটা পরীক্ষা আছে। সামাজিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার কথা অর্ণবের।’’

প্রথম দিনের ক্লাসে অর্ণব উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতা। জেলবন্দি অর্ণবের জন্য মোতায়েন থাকে কড়া নিরাপত্তা। এই পরিস্থিতিতে তিনি কী ভাবে ক্লাস করবেন, তা বর্ধমান জেলের সুপারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি কি সশরীরে উপস্থিত থেকে ক্লাস করবেন না কি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের সেক্রেটারি ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগে জেল কর্তৃপক্ষের চিঠি আসে।’’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সেখানে জেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, সশরীরে উপস্থিত হয়ে বা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্লাস করতে পারেন অর্ণব। তবে খুব প্রয়োজন ছাড়া অর্ণবকে ক্লাস করতে পাঠানো যাবে না। শেষ পর্যন্ত জেল থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে পাঠানো হয় অর্ণবকে।

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত সপ্তাহের সোমবার অর্ণবের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কাউন্সেলিং হয়। সে দিন কড়া নিরাপত্তার মাঝে বর্ধমান জেল থেকে অর্ণবকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ভবনে কাউন্সেলিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর গত শুক্রবার দুপুরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ইতিহাস বিভাগে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার নথিপত্র যাচাই করা হয়। তার পরেও মঙ্গলবারের ক্লাসে তিনি যোগ দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তৈরি হয় জট।

২০১০ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে থাকা ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলা হয়। সে দিনের হামলায় ২৪ জন ইএফআর জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। পাঁচ জন মাওবাদীও মারা গিয়েছিলেন। শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে অর্ণবকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তার পর থেকে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল, তার পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হয় হুগলির চুঁচুড়া সংশোধনাগার। সেখানে লাইব্রেরি রয়েছে। সেই লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা করেন। অর্ণব আগেই ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি আর্জি জানান। বিচারক তাঁর আদেশে সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন। এ বার সামাজিক ইতিহাসে গবেষণা শুরু করলেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

bardhaman university History
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE