Advertisement
E-Paper

মাওবাদী নেতা অর্ণব কি মঙ্গলে পিএইচডির ক্লাসে উপস্থিত হতে পারবেন! জেল কর্তৃপক্ষের চিঠিতে জট

জেলবন্দি অর্ণবের জন্য মোতায়েন থাকে কড়া নিরাপত্তা। এই পরিস্থিতিতে তিনি কী ভাবে ক্লাস করবেন, তা বর্ধমান জেলের সুপারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অর্ণব দাম।

অর্ণব দাম। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ২১:৪৯
Share
Save

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির ক্লাসে জেলবন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের উপস্থিত থাকা নিয়ে আবার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পিএইচডির ক্লাস শুরু হচ্ছে। সেই ক্লাসে সম্ভবত উপস্থিত থাকতে পারবেন না অর্ণব। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সোমবার বর্ধমান জেলা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া অর্ণবকে ক্লাসে পাঠানো যাবে না। তার পরেই অর্ণবের গবেষণা নিয়ে আবার তৈরি হয়েছে জটিলতা।

জেলবন্দি অর্ণবের জন্য মোতায়েন থাকে কড়া নিরাপত্তা। এই পরিস্থিতিতে তিনি কী ভাবে ক্লাস করবেন, তা বর্ধমান জেলের সুপারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি কি সশরীরে উপস্থিত থেকে ক্লাস করবেন না কি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন বর্ধমান জেল কর্তৃপক্ষ। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের সেক্রেটারি ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগে জেল কর্তৃপক্ষের চিঠি এসেছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সেখানে জেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সশরীরে উপস্থিত হয়ে বা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্লাস করতে পারেন অর্ণব। তবে খুব প্রয়োজন ছাড়া অর্ণবকে ক্লাস করতে পাঠানো যাবে না। ইন্দ্রজিৎ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার অর্ণব ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না, তা জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তবর্তিকালীন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই নিয়ে আমার কাছে কোনও খবর নেই। এখন ওই বিভাগই এ সব বলতে পারবে।’’

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত সোমবার অর্ণবের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কাউন্সেলিং হয়। সে দিন কড়া নিরাপত্তার মাঝে বর্ধমান জেল থেকে অর্ণবকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ভবনে কাউন্সেলিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর গত শুক্রবার দুপুরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ইতিহাস বিভাগে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার নথিপত্র যাচাই করা হয়। মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তা নিয়েই এখন তৈরি হয়েছে জট।

গত ২৬ জুন পুলিশি প্রহরার মধ্যে ইন্টারভিউয়ের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হন অর্ণব। গত ৫ জুলাই মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে দেখা যায়, ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬.৮৬৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন অর্ণব। ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মেধাতালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য ৯ জুলাই কাউন্সেলিংয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় অনিবার্য কারণে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত থাকছে।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অর্ণবের গবেষণায় বাধা দিচ্ছেন। উপাচার্য গৌতম অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, হুগলি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে দু’টি বিষয় তিনি জানতে চেয়েছেন। জবাব পাননি বলেই বিষয়টি আটকে রয়েছে। প্রসঙ্গত, সে সময় হুগলি জেলে ছিলেন অর্ণব। জেল সূত্রে জানা যায়, সেই চিঠি কারা দফতরকে পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের কারামন্ত্রী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়ে দেন, অর্ণবের গবেষণার বিষয়ে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তাঁকে বর্ধমান সংশোধনাগারে সরানো হবে বলেও জানিয়ে দেন। উপাচার্যের চিঠির জবাব পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও জানান তিনি। এই আবহে উপাচার্যকে ফোন করে কথা বলেন কুণালও। গত রবিবার দুপুরে অর্ণবকে হুগলি জেলা সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান জেলা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আনা হয়। সোমবার তিনি ভর্তি হন পিএইচডিতে।

২০১০ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে থাকা ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলা হয়। সে দিনের হামলায় ২৪ জন ইএফআর জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। পাঁচ জন মাওবাদীও মারা গিয়েছিলেন। শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে অর্ণবকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তার পর থেকে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল, তার পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হয় হুগলির চুঁচুড়া সংশোধনাগার। সেখানে লাইব্রেরি রয়েছে। সেই লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা করেন। অর্ণব আগেই ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি আর্জি জানান। বিচারক তাঁর আদেশে সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন।

Maoist

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}