Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

ভোটে হিংসার নিন্দা থেকে সিবিআই, বাহিনী নিয়ে রাজীবকে ভর্ৎসনা, কোর্টে ধাক্কা খেল কমিশন

এক দিনে তিন নির্দেশে ধাক্কা খেল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত ভোটে কত কেন্দ্রীয় বাহিনী আনাতে হবে তা ঠিক করে দেওয়ার পাশাপাশি রাজীব সিংহকে ভর্ৎসনাও করে আদালত।

Image of High Court.

আবার আদালতে ধাক্কা। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ২২:৩৪
Share: Save:

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের পরে বুধবার কলকাতা হাই কোর্টেও মুখ পুড়ল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। শুধু তাই নয়, ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছে কমিশনকে। এক দিকে বিচারপতি অমৃতা সিন্‌হা বলেন, ‘‘অশান্তি, রক্তপাত, জীবনহানি হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’ অন্য দিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কিত একটি মামলায় সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দেন তিনি। আবার রাজ্যে কী সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম তা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দায়িত্ব সামলাতে না পারলে কমিশনার রাজীব সিংহ যেন ‘রাজভবনে যান’, সেই পরামর্শও দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে রাজ্যপাল নতুন কাউকে কমিশনার করবেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তবে বুধবার হাই কোর্টে সবচেয়ে বড় ধাক্কা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েই।

গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচন করার নির্দেশ আগেই দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সময়সীমা ছিল ৪৮ ঘণ্টা। তবে সেই সময়সীমা পার হওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টে যায় কমিশন। সেখানেও কমিশনের পক্ষে রায় যায়নি। হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। এর পরে কমিশন কেন্দ্রের কাছে প্রতি জেলার জন্য এক কোম্পানি করে বাহিনী চায়। তা নিয়ে ফের আদালতে যায় বিরোধীরা। পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করা হয়নি— এই অভিযোগ তুলে কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিল বিরোধীরা। বিজেপির তরফে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালু ওই মামলা করেন। শুনানির জন্য ওই মামলা ওঠে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানির শুরুতেই কমিশনকে বলেন, ‘‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, এত কিছুর পরেও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হচ্ছে। আপনারা দয়া করে হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করুন।’’

কত কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই

পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, বুধবার তা নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তার থেকে কম কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা চলবে না। শুধু তা-ই নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই বাহিনীর জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে। বিজেপি আদালতে জানিয়েছিল, ২০১৩ সালে ৫ দফায় রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল। তাতে ৮০০ কোম্পানি (৮২,০০০ সদস্য) কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্যে। আর রাজ্যের পুলিশ ছিল ১ লাখ ৫ হাজার। মামলাকারীদের এই বক্তব্য শোনার পর আদালত জানিয়েছে, তারা বিস্মিত যে সেই সময় রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল নির্বাচন কমিশন আর এ বার ঠিক উল্টোটা ঘটেছে। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, “এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তার জন্যও অন্তত ওই সংখ্যক বা তার বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’’ আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ যে, তখন ১৭টি জেলা ছিল। এখন জেলার সংখ্যা ২২। তাই ২০১৩ সালের মতো বা তার থেকে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী এ বারও মোতায়েন করতে হবে।

রাজীবকে কড়া বার্তা

কমিশনের তরফে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বুধবার প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, ‘‘বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এত কিছুর পরেও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। হাই কোর্টের অর্ডার পালন করুন।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘কমিশনার যদি না-পারেন তা হলে রাজ্যপালের কাছে যান। তিনি অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। এখানে থেকে এগুলি আশা করা যায় না। এত ঘটনার পরে কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’ শুধু এটুকুই নয়, বুধবার কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও তুলেছেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি ভর্ৎসনার সুরে বলেন, ‘‘কমিশন আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে। ১২ জুন পঞ্জাব সরকারের কাছে বাহিনী চেয়ে আবেদন করে রাজ্য। বলা হয়, ৬ জুলাই সকাল থেকে বাহিনী প্রয়োজন। ৮ জুলাই ভোটগ্রহণ আর ৬ জুলাই থেকে বাহিনী মোতায়েনের অর্থ কী?’’ একই সঙ্গে বিচারপতি বলেন, ‘‘১৩ ও ১৫ জুন শুনানির সময়ে আদালত গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার কথা বলেছিল। কিন্তু ১২ জুন পঞ্জাব সরকারের কাছে যে আবেদন করা হয়েছে তা ওই দু’দিনের শুনানিতে আদালতকে জানানোই হয়নি। তথ্য গোপন করা হয়েছে।’’ শুনানির সময় কমিশনের কোনও কর্তা কেন আদালতে হাজির ছিলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে শুক্রবার।

নির্বাচনে রক্তপাত নিয়ে প্রশ্ন

প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কমিশনকে ভর্ৎসনা করার আগেই বুধবার সকালে অন্য একটি মামলায় এত হিংসার পরিবেশে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্‌হা। বিভিন্ন জেলায় হিংসা, একের পর এক মৃত্যুর অভিযোগে বিরোধীদের একাংশ একটি মামলা করেছিল হাই কোর্টে। তার শুনানিতেই বুধবার বিচারপতি সিন্‌হা বলেন, ‘‘অশান্তি, রক্তপাত, জীবনহানি হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’ একই সঙ্গে বিচারপতি সিন্‌হা তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, অশান্তির জন্য যদি কোনও প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে না পারেন, তবে তাঁদের অতিরিক্ত সময় দেওয়া উচিত কমিশনের। কমিশনকে সতর্ক করে বিচারপতির সংযোজন, ‘‘মারধর, ধর্ষণের হুমকির মতো অভিযোগ নিয়ে অনেকে মামলা করছেন। এগুলো কেন হবে?’’ এর পরেই হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, ‘‘এই সব প্রার্থীদের নির্বাচনে লড়তে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে কমিশনকে।’’

পঞ্চায়েত ভোটেও সিবিআই

বিচারপতি সিন্‌হা অন্য একটি মামলায় বুধবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্ব চলার মধ্যেই আদালতের এমন বেনজির নির্দেশ এক সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী নথি বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য সরকারের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) মনোনয়নপত্রের নথি বিকৃত করার জন্য দুই প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়। সেই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই দুই প্রার্থী। সেই মামলায় বুধবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি সিন্‌হার পর্যবেক্ষণ, অভিযোগ যে হেতু রাজ্য সরকারের আধিকারিকের বিরুদ্ধে তাই তদন্তে রাজ্য পুলিশের উপরে ভরসা করা যায় না। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আগামী ৭ জুলাই তদন্তের রিপোর্ট আদালতে পেশ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE