Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

কমিশনার পদ সামলাতে না পারলে রাজ্যপালের কাছে যান, দায়িত্ব নিন অন্য কেউ, রাজীবকে বার্তা আদালতের

সরাসরি না বললেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহকে কড়া বার্তাই দিল কলকাতা হাই কোর্ট। নিজে সামলাতে না পারলে তাঁকে রাজ্যপালের কাছে যেতে বলেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েও কড়া নির্দেশ কোর্টের।

Rajiva Sinha

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ১৮:২৫
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে চলতি বিতর্কের মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে বেনজির বার্তা দিল আদালত। বুধবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিল, রাজীব সিংহ ভোট সামলাতে না পারলে যেন রাজ্যপালের কাছে যান। প্রয়োজনে রাজ্যপাল নতুন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দেবেন। সরাসরি না বললেও দায়িত্ব সামলাতে না পারলে রাজীবকে ইস্তফা দেওয়ার বার্তাই দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।

গত ১৩ জুন কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার কথা ভাবতে বলে নির্বাচন কমিশনকে। এর পরে ১৫ জুনের নির্দেশে বলা হয় গোটা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করতে হবে। বাহিনী আনতে কেন্দ্রের কাছে আবেদনের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয় আদালত। কিন্তু সেই সময়সীমার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে যায় কমিশন। যদিও মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে অবাধ ও স্বচ্ছ ভোটের জন্য হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ২২ জেলার জন্য এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর সেখানেই আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা।

কম সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা হচ্ছে বলে অভিযোগের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়সীমা মানা হয়নি বলে আদালত অবমাননার অভিযোগও উঠেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বুধবার প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, ‘‘বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এত কিছুর পরেও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। হাই কোর্টের অর্ডার পালন করুন।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘কমিশনার যদি না পারেন তা হলে রাজ্যপালের কাছে যান। তিনি অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। এখান থেকে এগুলো আশা করা যায় না। এত ঘটনার পরে কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’

আগে হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বললেও কত বাহিনী তা আলাদা করে উল্লেখ করে দেয়নি। কমিশন রাজ্যের ২২টি জেলার জন্য ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর আবেদন জানায় মঙ্গলবার। বিস্তীর্ণ এলাকায় নির্বাচন সামলাতে এত কম বাহিনী আনা নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য ছিল নাম কা ওয়াস্তে আদালতের নির্দেশ মানছে কমিশন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার আদালত নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কত বাহিনী আনতে হবে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি আদালতকে জানিয়েছিল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্যে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেছেন, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তার জন্যও ওই সংখ্যক বা তার বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। কমিশন ২২টি জেলার জন্য যে ২২ কোম্পানি অর্থাৎ ২০০০-এর মতো আধা সেনা মোতায়েনের কথা বলেছে, তা করলে চলবে না।

সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ তেমনই কমিশনারকে রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়াকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিরোধীরা। দাবি করা হচ্ছে, এমনটা বলার অর্থ কমিশনারকে ভর্ৎসনা করা। প্রসঙ্গত, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। রাজীবের নাম প্রথম দিকে পছন্দ না হলেও পরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নবান্নের প্রস্তাবে সিলমোহর দেয়। যদিও সেটা সঠিক হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ বার না সামলাতে পারলে কমিশনারকে রাজ্যপালের কাছে যেতে বলাকে আদালতের কড়া বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে।

শুধু এটুকুই নয়, এ দিন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও তুলেছেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি ভর্ৎসনার সুরে বলেন, ‘‘কমিশন আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে। ১২ জুন পঞ্জাব সরকারের কাছে বাহিনী চেয়ে আবেদন করে রাজ্য। বলা হয়, ৬ জুলাই সকাল থেকে বাহিনী প্রয়োজন। ৮ জুলাই ভোটগ্রহণ আর ৬ জুলাই থেকে বাহিনী মোতায়েনের অর্থ কী?’’ একই সঙ্গে বিচারপতি বলেন, ‘‘১৩ জুন ও ১৫ জুন শুনানির সময়ে আদালত গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার কথা বলেছিল। কিন্তু ১২ জুন পঞ্জাব সরকারের কাছে যে আবেদন করা হয়েছে তা ওই দু’দিনের শুনানিতে আদালতকে জানানোই হয়নি। তথ্য গোপন করা হয়েছে।’’

এখন কমিশন যে পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে চাইছে তা নিয়ে সমালোচনা করেন প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম। তিনি বলেন, ‘‘সব জেলায় পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে বলেছিল আদালত। আমি বলেছিলাম, রাজ্যের সব জেলায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে। বলেছিলাম, সময় যত গড়াবে ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে। তাই দেরি না করে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশকে কার্যকর করার কথা মনেই করেনি কমিশন।’’

কমিশনের তরফে বার বার রাজ্য সরকারের কথা বলা এবং কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কমিশনের সুপ্রিম কোর্টের যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কোনও নির্দেশ পছন্দ না হলে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে কিন্তু আদালতে অন্য কারও কথা বলবেন না। প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, কমিশন স্বাধীন সংস্থা। নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করুন। এক দফায় তিন স্তরের ভোট হচ্ছে। এটা কোনও শহরের ভোট নয় যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। গ্রাম এলাকায় চট করে কোথাও চলে যাওয়া যাবে না। কোথাও কিছু ঘটলে কত ক্ষণে বাহিনী গিয়ে পৌঁছবে। এই সব কি বিবেচনা করেছিলেন? করলে এত কম কেন্দ্রীয় বাহিনীর আবেদন কী করে করলেন? আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।’’

কমিশন বার বার অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ আনার কথা বলে এসেছে আদালতে। সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যের পুলিশ আনলে ভাষার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীতে উচ্চপদস্থ কর্তারা থাকায় সেটা হয় না।’’

বুধবার শুনানির সময় কমিশনের কোনও কর্তা হাজির ছিলেন না আদালতে। তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘মামলার সময় কমিশনের এক জন আধিকারিক আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেন না? তাঁরা এত ব্যস্ত? আমরা তো দেখেছি সিইএসসি মামলার সময় তাদের এক জন আধিকারিক আদালতে উপস্থিত থাকেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE