Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ঝাঁকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাই ছুটছেন সকলে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাঁকি দিয়ে যাওয়ার পরে চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, পূর্ণ উদ্যমে নেমে পড়লেন স্থানীয় শাসক নেতৃত্ব। মন্ত্রী থেকে নেতা, শুক্রবার সকলকেই দেখা গেল সকাল থেকে ছুটতে। কেউ এবেলা গজলডোবায় তো ওবেলা শিলিগুড়িতে। কেউ ছুটলেন হাসপাতাল দেখতে। কেউ আবার সংবর্ধনার মালা দ্রুত খুলে রেখে জোর দিলেন কাজে ফাঁকি বন্ধ করার ব্যাপারে।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাঁকি দিয়ে যাওয়ার পরে চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, পূর্ণ উদ্যমে নেমে পড়লেন স্থানীয় শাসক নেতৃত্ব। মন্ত্রী থেকে নেতা, শুক্রবার সকলকেই দেখা গেল সকাল থেকে ছুটতে। কেউ এবেলা গজলডোবায় তো ওবেলা শিলিগুড়িতে। কেউ ছুটলেন হাসপাতাল দেখতে। কেউ আবার সংবর্ধনার মালা দ্রুত খুলে রেখে জোর দিলেন কাজে ফাঁকি বন্ধ করার ব্যাপারে।

এক কথায়, ঝাঁকিদর্শনের পরে সকলেই এখন কাজে ডুবে। কারণ, জুলাইয়ে আবার উত্তরবঙ্গে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলেই চিন্তিত, তখন যদি কাজের খতিয়ান চেয়ে বসেন, তবে দেখাব কী!

সে জন্যই এ দিন সাতসকালে গজলডোবা ছুটলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম প্রিয় পর্যটন প্রকল্প গজলডোবা। সেই কাজ কেন থমকে, কী ভাবে তা ২০১৭ সালের পুজোর আগে শেষ করা যায়, চার ঘণ্টা ধরে সে সব খুঁটিয়ে দেখলেন। দুপুরেই আবার তাঁকে দেখা গেল শিলিগুড়িতে। ৩৫-৪০ কিলোমিটার উজিয়ে ফিরে এসে ঢুকে পড়লেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে বৈঠক ছিল রোগী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সমিতিকে গৌতমবাবু নির্দেশ দেন, আগের পাঁচ বছরে সুপারিশ অনুযায়ী কোন কোন কাজ হয়নি, সেই তালিকা যেন দ্রুত তৈরি করা হয়। আগের পাঁচ বছরেও সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এর আগে সমিতির সভায় যে সব সুপারিশ গৃহীত হয়েছে, তার কোনটা নিয়ে কাজ হয়েছে, কোনটায় হয়নি— সব জানাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।’’

শিলিগুড়ি হাসপাতালেও পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ দিন সেখানে যান রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। সবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। এলাকায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা করার সুবাদে শিলিগুড়ি হাসপাতালকে ভালই চেনেন তিনি। তাই আর দেরি না করে শুক্রবার চিকিৎসক দিবসকে বেছে নিলেন হাসপাতাল পরিদর্শনের জন্য। ঘুরে দেখে জানালেন, এ বার থেকে সব ওয়ার্ডের সামনে অভিযোগ জানানোর বাক্স ঝোলানো হবে। হাসপাতালেই মিলবে অভিযোগের ফর্মও। বলেন, ‘‘এক জন অফিসার রোজ অভিযোগগুলি দেখে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। তা দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে স্বাস্থ্য দফতর।’’ কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারই বা পিছিয়ে থাকবে কেন! উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার সদ্যনিযুক্ত চেয়ারম্যান মিহির গোস্বামী এ দিন অফিস শুরুর আগেই দফতরে হাজির। অফিসার-কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইউনিয়নের নাম করে নেতা বা সদস্যরা আর কাজে ফাঁকি দিতে পারবেন না। সংস্থাকে লোকসানের হাত বাঁচাতে ফাঁকি বন্ধ করতেই হবে।

এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীও বিশেষ পিছিয়ে নেই। জলপাইগুড়িতে এসজেডিএ-র অফিসে বৈঠক করেন তিনি। কাজে গতি আনতে ১৫ দিনের মধ্যে রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দেন সেখানে। বিধানসভায় থাকলেও বিকেল থেকে কয়েক দফায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে ফোন করে অফিসারদের অসমাপ্ত প্রকল্পগুলির ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তৈরির নির্দেশ দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার উত্তরবঙ্গে আসবেন। কয়েক দিন থাকবেন। তাই সকলেই অতি মাত্রায় সতর্ক।’’

দিনের শেষে নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেই একান্ত আলোচনায় মানছেন, সদ্য সমাপ্ত উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রীর যে মেজাজ দেখা গিয়েছে, তাতে কাজে ফাঁকি দিলেই বিপদ হতে পারে। তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে ছোটা ছাড়া উপায় নেই!

অন্য বিষয়গুলি:

TMC action party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE