বাবুনের ইফতার চিন্তা আরও বাড়িয়েছে প্রসূনের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দিদি নিজের অফিস সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন গঙ্গার পশ্চিমে। ভাইও কি এ বার সে পথেই? হাওড়াকে ঘিরে এমনই জল্পনা শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের আগের বছরে। আর তাতেই বাড়ছে হাওড়ার বর্তমান তৃণমূল সাংসদের কপালের ভাঁজ। তৃণমূল অন্দরে গুঞ্জন অন্তত তেমনই।
গুঞ্জন দু’টি নামকে কেন্দ্র করে। প্রথম নামটি হল বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা। রাজনীতি এবং সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে সর্বক্ষণ যুক্ত।
দ্বিতীয় নামটি হল প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তৃণমূলের টিকিটে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে পর পর দু’বার নির্বাচিত সাংসদ। প্রাক্তন ফুটবলার তো বটেই।
আরও পড়ুন: আবার অস্ত্রোপচার দরকার, হায়দরাবাদে অভিষেক, তৃণমূলের নীরবতায় ছড়াচ্ছে জল্পনা
বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি যে হেতু কালীঘাট এলাকায়, সে হেতু তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যকলাপের সূচনাও মূলত ওই অঞ্চল থেকেই। কয়েক দশক ধরে বাবুনবাবুর রাজনৈতিক সক্রিয়তা ছিল ‘দিদি’র খাসতালুক দক্ষিণ কলকাতাতেই। কিন্তু ইদানীং মুখ্যমন্ত্রীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর যেন কিছুটা সরে গিয়েছে। অন্তত বছর চারেক ধরে তাঁর মনোযোগ মূলত গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের শহরে। রক্তদান শিবির, ক্রিকেট-ফুটবল-বক্সিং টুর্নামেন্ট আয়োজন, এলাকার উৎসব-অনুষ্ঠানে উজ্জ্বল উপস্থিতি, কিশোরকুমার স্মরণ— গত কয়েক বছর ধরে হাওড়ায় এ রকম নানা কর্মসূচি নিচ্ছেন বাবুন। ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছেন জনসংযোগ। হাওড়া তৃণমূলের অধিকাংশ কেউকেটাকেই আজকাল দেখা যাচ্ছে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশেপাশেই। জল্পনা তাই দাবানলের আকার নিতে শুরু করে দিয়েছে এ বার।
জল্পনাটা ঠিক কী রকম? হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৯ সালে জোড়াফুল প্রতীকের প্রার্থী আর প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় নন। প্রার্থী হবেন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবুন নিজে অন্তত সে চেষ্টাই চালাচ্ছেন। জল্পনা এই রকমই। তৃণমূলের অন্দরে তো বটেই, বাইরেও রয়েছে গুঞ্জনটা।
সোমবার হাওড়ায় বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইফতার পার্টি এই রকমই নক্ষত্রখচিত ছিল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
গুঞ্জন আরও বেড়েছে সোমবার হাওড়ায় বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার পার্টির চেহারাটা দেখার পরে। ডুমুরজলা স্টে়ডিয়ামের উল্টো দিকে স্বামীজি স্পোর্টিং ক্লাব চত্বরে আয়োজিত হয়েছিল এই কর্মসূচি। কে কে ছিলেন বাবুনের ইফতারে? ছিলেন হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী, উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল, বালির তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়ার ভাই তথা প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার ছেলে অভিষেক, শিবপুরের তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ি। ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, মনোজ তিওয়ারি। নক্ষত্রখচিত ইফতার পার্টিতে আমন্ত্রিতের সংখ্যাটা ছিল হাজার চারেক। কিন্তু বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ইফতারে দেখা যায়নি হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার জঙ্গলে পাখি থেকে হরিণ খেয়ে সাফ, সৌজন্যে নাগা পুলিশ
মেয়র রথীনের সঙ্গে বাবুনের সম্পর্ক বরাবরই ভাল। কিন্তু হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা মধ্য হাওড়াক বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের সঙ্গে বাবুনের সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’, তা নিয়ে অনেক রকম কথা শোনা যায়। বাবুন-প্রসূন সমীকরণ নিয়েও ফিসফাস বিস্তর। ফিসফাস নিতান্ত অকারণে যে নয়, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে বলে হাওড়ার তৃণমূল কর্মীদের একাংশও মনে করছেন।
বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কী বলছেন এ প্রসঙ্গে? তিনি বলছেন, ‘‘হাওড়ায় কে দাঁড়াবেন, সে বিষয়ে আমি কিছু বলব না। আমি শুধু বলতে পারি, আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, আমি কাজ করে যাচ্ছি।’’ কিন্তু বেছে বেছে হাওড়াতেই ‘কাজ’ করছেন কেন? বাবুন বললেন, ‘‘হাওড়া আমার নিজের ঘরের মতোই। হাওড়ায় আমি এক সময়ে চাকরি করতাম। হাওড়ার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ দীর্ঘ দিনের। এটা নতুন কিছু নয়।’’ শোনা যাচ্ছে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার সাংসদ হতে চাইছেন, তার জন্য হাওড়া কেন্দ্রকে বেছে নিয়েছেন। এ কথাতেও বিচলিত হলেন না মুখ্যমন্ত্রীর ভাই। সপ্রতিভ ভঙ্গিতেই বরং বললেন, ‘‘জীবনে বড় হতে সবাই চায়। আমিও চাই। মানুষের জন্য আরও কাজ করতে চাই। এ বার বড়টা কী ভাবে হব, কাজের সুযোগ কী ভাবে পাব, সেটা আমাদের নেত্রীই ঠিক করবেন। সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। হাওড়া কেন, বাংলার যে কোনও প্রান্তে কাজ করতে আমি প্রস্তুত। নেত্রী যেমন বলবেন, তেমনই হবে। হতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নিজের দিদি। কিন্তু তার চেয়ে বেশি করে তিনি আমার নেত্রী।’’
আরও পড়ুন: ১৭ মে বৃষ্টিই পড়েনি! গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই কি সামনে আসে ‘নগ্ন ভিডিও’?
অর্থাৎ, হাওড়া থেকে তিনি লড়তে পারেন বলে যে জল্পনা রয়েছে বা তিনি সংসদে যেতে চাইছেন বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা এক বারের জন্যও নস্যাৎ করলেন না মুখ্যমন্ত্রীর ভাই। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ে অস্বস্তি বাড়া স্বাভাবিক।
কী বলছেন প্রাক্তন ফুটবলার তথা হাওড়ার দু’বারের সাংসদ? তিনিও তাকিয়ে রয়েছেন নেত্রীর মুখের দিকেই। ‘‘এখনও আমিই হাওড়ার সাংসদ। আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত আমিই সাংসদ থাকব। হাওড়ার মানুষ আমাকে দু’লক্ষ ভোটে জিতিয়েছেন। আমি হাওড়ার মানুষের জন্য রোজ সকাল ৬টা থেকে রাত ২টো পর্যন্ত খাটি। এর পর নেত্রী যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।’’ বললেন প্রসূন। কিন্তু বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী নির্বাচনে হাওড়া থেকে লড়তে চান বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, তার কি কোনও ভিত্তি রয়েছে? প্রসূন বললেন, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না। কে কী বলছেন, জানি না। সিদ্ধান্ত নেত্রীই নেবেন, অন্য কেউ নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy