লেপচা বোর্ডের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। কালিম্পঙে। — বিশ্বরূপ বসাক
পাহাড়ে বোর্ডের পর বোর্ড গড়ে জিটিএ অধিপতি বিমল গুরুঙ্গের ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারও কালিম্পঙের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে চারটি বোর্ড গড়ার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। কিন্তু বিমলের কাছে তার থেকেও গুরুতর খবর, মুখ্যমন্ত্রী পুজোর পরে গুরুঙ্গদের জন্যও বোর্ড গড়তে চলেছেন। এই ঘোষণাও তিনি এ দিন ওই মঞ্চ থেকেই করেছেন। যা শুনে অনুষ্ঠানে হাজির অনেকেই বলছেন, এ বার তো মোর্চা প্রধানকে সোজা তাঁর ঘর থেকেই উৎখাত করতে চাইছেন মমতা!
ভোট ব্যাঙ্ক যে ভাঙছে, সেটা বোঝা গিয়েছে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটেই। পাহাড়ের তিনটি আসন মোর্চা ধরে রাখতে পেরেছে ঠিকই, কিন্তু জয়ের ব্যবধান কমেছে অনেক। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মোর্চা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ। উন্নয়ন কেন হচ্ছে না, এই প্রশ্নের জবাবে গুরুঙ্গরা বরাবর রাজ্যের বঞ্চনার কথা বলে আসছিলেন। এ দিন সেই অভিযোগও নস্যাৎ করার চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দাবি করেছেন, জিটিএ-কে কাজের জন্য পরিকল্পিত, পরিকল্পনা বর্হিভূত সব খাত মিলিয়ে গত চার বছরে ৪ হাজার কোটিরও বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। তার পরেই কতটা কাজ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
পঞ্চায়েত, পুরসভা, জিটিএ বা সাংসদ-বিধায়ক— কোথাও তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি নেই। এ কথা এ দিন আরও এক বার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘লোকসভা-বিধানসভায় আপনারা যাকে ভাল মনে করেছেন, ভোট দিয়েছেন। জিততে পারিনি বলে আমি দুঃখিত নই। আমি পাহাড় ভালবাসি। এক দিন আপনারা সুন্দর দার্জিলিং তৈরির জন্য পরিবর্তন আনবেন, সেই দিনের অপেক্ষা করি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তৃতার গায়ে রাজনৈতিক তকমা সেঁটে দিয়েছে মোর্চা। তাদের বক্তব্য, সামনেই ভোটের মরসুম। তার আগে সরকারি মঞ্চকে (এ দিন ছিল লেপচা বোর্ডের পঞ্চম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান) তিনি ভোট প্রচারের জন্য বেছে নিয়েছেন। সব ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে পাহাড়ের চার পুরসভায় ভোট হতে পারে। পঞ্চায়েতের মেয়াদও ফুরিয়েছে বহু দিন আগে। সেই ভোটও চলতি বছরের শেষে হতে পারে। জিটিএ নির্বাচনেরও বেশি বাকি নেই। এই অবস্থায় পাহাড়ে যে পরিবর্তনের ডাকও দিয়ে রাখলেন মমতা, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন স্থানীয় মানুষ। তাঁরাই বলছেন, একে তো এত বোর্ডের ধাক্কায় বিমলকে কোণঠাসা করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তার উপরে গুরুঙ্গদের জন্যও বোর্ড গড়বেন বলে গেলেন। মোর্চা প্রধান এ বার কী বলবেন?
রাজ্যের বঞ্চনার কথা বলে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিমল। এ দিন তিনি নিজে কিছু বলেননি। তবে মুখ খুলেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা রোশন গিরি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার জিটিএ-র কাজে পদে পদে বাধা দিয়েছে। একের পর এক বোর্ড গড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন করে চলেছে। যত বিভাজনের চেষ্টা হবে, পাহাড়বাসী তত এক হয়ে মোর্চকে সমর্থন করবে।’’
এখন পর্যন্ত ক’টা বোর্ড হল, সেই প্রশ্নও উঠেছে কালিম্পঙের জনসভায়। আগে ছিল ১০। এ দিন হল আরও ৪। সব মিলিয়ে ১৪। বক্তৃতার সময় দেখা গেল, মমতা নিজেও এই সংখ্যাটা ঠিক মনে করতে পারছেন না। এ দিন তিনি খাস, নেওয়ার, ভূজেল ও একটি সংখ্যালঘু বোর্ড গঠনের ঘোষণা করেন। মঞ্চ থেকে বিভিন্ন বোর্ডগুলির হাতে সব মিলিয়ে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। লেপচা-সহ বিভিন্ন বোর্ডের ঘর,
স্কুল, পড়ুয়াদের আবাস-সহ অন্তত সাড়ে ৮ কোটি টাকা প্রকল্পের শিলান্যাসও হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে দ্রুত কালিম্পঙে কাজ শুরু হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, মিরিককে মহকুমা ঘোষণা করা হবে। নিজস্ব কায়দায় তিনি বলেন, ‘‘পরিকাঠামো গড়তে ৬ কোটি টাকা দিয়েছি। পরের বার যখন আসব তখন হয়তো পৃথক জেলা হিসেবে কালিম্পং কাজ শুরু করে দেবে।’’
এত কিছুর পরেও পাহাড়ে কি পরিবর্তন আসবে? প্রশ্ন এখন পাহাড়বাসীর মুখে মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy