মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজের কলকাতা সফরের সময়সূচি গত কাল বদলাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফর যাতে নির্ধারিত সময়েই হয়, তা নিশ্চিত করতে আজ নিজের উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে পূর্ব নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ২৪ মার্চ-ই কলকাতায় যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
মোদী চাইছিলেন, এ মাসের শেষে কলকাতা সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রী যেন শহরে থাকেন। প্রথমে কথা ছিল, প্রধানমন্ত্রী ২৪ বা ২৫ মার্চ কলকাতা যাবেন। কিন্তু সেই সময় মমতার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার কথা। জলপাইগুড়িতে কয়েকটি সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ২৬ মার্চ তাঁর কলকাতায় ফেরার কর্মসূচি ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের কথা জানার পরেই প্রধানমন্ত্রী নিজের সফরসূচি বদলে ২৬ মার্চ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাঁর জন্য যাতে মোদীকে কর্মসূচি বদলাতে না হয়, সে জন্য আজ নিজের উত্তরবঙ্গ সফরই বাতিল করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। আজ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গ সফরের কর্মসূচি নির্ধারিত সময়েই রাখতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে মমতার সঙ্গে মোদীর সাক্ষাতের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হল। সাংবিধানিক প্রথা মেনে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতেও হাজির থাকতে পারেন মমতা।
এ বারের সফরে ইস্কোর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর সচিবালয় থেকে জানতে চাওয়া হয়, পুরভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর এই অনুষ্ঠানটি আদর্শ আচরণবিধির আওতায় পড়বে কি না? জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ইসকোর যে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার কথা, সেটি নির্বাচনবিধির আওতায় পড়ছে না। কারণ, অনুষ্ঠানটি হবে আসানসোলে। ইসকোর অনুষ্ঠান ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অসুস্থ প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দকে দেখতে যাওয়াও প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে রয়েছে।
প্রশ্ন হল, সাম্প্রতিক অতীতেও যে মোদীকে তিনি চড়া সুরে আক্রমণ করতেন, এখন সেই মোদীর সফরসূচি বহাল রাখতে মমতা এত তৎপর কেন?
মমতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “এটি রাজ্যের উন্নয়নের বিষয়। নিতিন গডকড়ীও গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করছেন। জাতীয় সড়কেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইসকোর অনুষ্ঠানটিও উন্নয়নের বিষয়। সেখানে রাজ্য সরকার জমি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। আমরা এতে খুশি। এটাই উন্নয়নের আদর্শ মডেল।” তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, মাত্র সপ্তাহখানেক আগে দিল্লিতে এক টেবিলে মুখোমুখি বসার পর উন্নয়নের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, মমতা তা বজায় রাখতে চাইছেন। তিনি চান না, উন্নয়নের গতি কোনও ভাবে স্তব্ধ হয়ে যাক। রাজ্য সরকারের সূত্রের বক্তব্য, ইসকোর এই প্রকল্পের জন্য ৩২২৩ একর জমি দিয়েছে রাজ্য। তার মধ্যে ২২৫৮ একর বার্নপুরে ও ৯৬৫ একর কুলটির কারখানার জন্য।
তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “উন্নয়নের বিষয়টি বিজেপি বনাম তৃণমূলের নয়। এটি কেন্দ্র ও রাজ্যের সাংবিধানিক বিষয়। ইউপিএ আমলেও জয়রাম রমেশের সঙ্গে রাজ্যের বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করেছি আমি। আজও মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে উন্নয়নের বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছেন, সেটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক মেনেই।” প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন মোদী। সেই সূত্রেই ভোটের ময়দানে দুই দল যতই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করুক, উন্নয়নের নিরিখে উভয় পক্ষই সহযোগিতার পরিবেশ ও পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বাড়াতে চাইছে। আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ও প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সফর কর্মসূচি বাতিল প্রসঙ্গে তিনি কিছুটা কটাক্ষের সুরেই বলেন, “এটা ভাল যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখন উন্নয়নের নিরিখে নরেন্দ্র মোদীর দেখানো পথেই চলছে।”
মোদীর আসানসোল সফরের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে আগামিকালই কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে নিয়ে বার্নপুর যাওয়ার কথা ছিল বাবুলের। কর্মসূচিটি রাতে বাতিল করা হয়। কারণ মোদীকে দিয়ে ওখানে একটি সভা করানোর পরিকল্পনা থাকলেও পরীক্ষার কারণে মাইক বাজানো নিয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেই সভা করা যাবে না। এ দিকে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে প্রকাশ্যে সমাবেশ করাতে যথেষ্টই আগ্রহী বাবুল। তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের নজরেও এনেছেন। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কী ভাবে সব দিক বজায় রেখে সভার আয়োজন করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy