মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীর (বড়মা) জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— নিজস্ব চিত্র।
ঐক্যের আহ্বান, একগুচ্ছ ঘোষণা এবং নাম না করে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ। ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে ঠিক এই পথেই এগোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় বছর দশেক ধরে তৃণমূলের অনুকূলে থাকা মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক যে একটু অগোছালো হয়ে পড়েছে, তৃণমূল নেতৃত্ব তা ভালই বুঝতে পারছেন। বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ বুঝিয়ে দিল যে, লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে তিনি মতুয়া ভোটব্যাঙ্কটা ফের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন।
মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীর (বড়মা) জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই এ দিন ঠাকুরনগরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বড়মার ১০০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। মতুয়া মহাসঙ্ঘের যে শিবির মমতাবালা ঠাকুরের নিয়ন্ত্রণাধীন, তারা বড়সড় জমায়েতের আয়োজনই করেছিল এ দিন। ঠাকুরবাড়ির একটি অংশ অবশ্য দাবি করেছে, বড়মার বয়স এখনও ১০০ ছোঁয়নি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সর্বাগ্রে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির অন্দরের এই বিভাজন মেরামতের বার্তাই দেন। বিভেদ নয়, ঐক্যই মতুয়াদের শক্তি— বড়মার ‘জন্মশতবর্ষ’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার এমনই মন্তব্যই করেন মমতা।
আরও পড়ুন: বড়মার বয়স তো ৯৮! শতবর্ষ কী ভাবে? মমতার অনুষ্ঠানের আগে তীব্র আপত্তি নাতির
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক সংগঠনেও এ বার মিটুর ঝড়!
বড়মার বড় ছেলের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর তৃণমূলেই রয়েছেন। তিনি বনগাঁর সাংসদ। কিন্তু বড়মার ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে এখন তৃণমূলের দূরত্ব বিস্তর। মঞ্জুলের বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুর ইতিমধ্যেই একবার বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েছেন। মঞ্জুলের ছোট ছেলে শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গেও বিজেপির ঘনিষ্ঠতা এখন সর্বজনবিদিত। মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে এই বিভাজন দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদহ-সহ বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের ক্ষতি করতে পারে বলে রাজনৈতিক শিবিরের মত। বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে গিয়ে তাই সর্বাগ্রে বিভেদ ভুলে মতুয়াদের এক হওয়ার ডাকই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন।
ঠাকুরনগরে পৌঁছে এ দিন বড়মার সঙ্গে দেখা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন মমতাবালা ঠাকুরও। বড়মাকে বাংলার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ দেওয়া হয়। তার পরে নিজের ভাষণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য জমি দেখা হয়ে গিয়েছে। চাঁদপাড়ায় ৮.৮ একর জমি আমি কৃষি বিভাগ থেকে শিক্ষা বিভাগকে দিয়েছি। ওই জমিতে আজই বোর্ড লাগানো হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে কলেজ আগেই করেছি। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ও হচ্ছে। মতুয়া সঙ্ঘ বিকাশ পরিষদ তৈরি করেছি। মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে দুটো গেট আমরা বানিয়ে দেব। গোটা এলাকায় আলো লাগিয়ে দেওয়া হবে। পুরো ঠাকুরবাড়ি সাজিয়ে দেওয়া হবে।’’
বড়মাকে বঙ্গবিভূষণ দেওয়া, হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঠাকুরবাড়ির সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প ঘোষণা করা, মতুয়াদের জন্য সরকার কী কী ইতিমধ্যেই করেছে, তারও ফিরিস্তি তুলে ধরা— ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই যে এত কিছু, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সংশয় নেই।
যে বিজেপি মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানোর চেষ্টায় রয়েছে, সেই বিজেপিকে যে ঠাকুরনগরের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রমণ করবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। হলও তাই। বিজেপির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেননি। কিন্তু এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জী) ইস্যুতে বিজেপিকে তিনি তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘জঘন্য, নিম্নমানের রাজনীতি হচ্ছে। প্রকৃত নাগরিকদের নাম এনআরসি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এনআরসির নাম করে অসমে বাঙালি খেদাও শুরু হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমরা এটা করি না, আমরা কাউকে খেদাই না, আমরা সবাইকে আপন করে নিই।’’
বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy