Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

বীরসিংহে বিদ্যাসাগর স্মরণেও এনআরসি নিয়ে সরব মমতা

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি বীরসিংহের মাটিতে এসে বলে যাচ্ছি, বাংলায় কোনও মতে এনআরসি হতে দেব না। দশ বছর অন্তর জনগণনা হয়। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
বীরসিংহ শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৩০
Share: Save:

উপলক্ষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দু’শো বছরে তাঁর স্মৃতিতর্পণ। ‘বর্ণপরিচয়ের আঁতুড়ঘর’ বীরসিংহের সেই মঞ্চেই বাঙালির ভাবাবেগ উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই সূত্রে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রসঙ্গে রাজনৈতিক আক্রমণ শানালেন কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে। হুঁশিয়ারির সুরে বললেন, ‘‘ওরা বলছে, ১৯৭১ সালের সার্টিফিকেট চাই। কিন্তু বাংলার মাটিকে ভয় দেখানো যায় না, জব্দ করা যায় না।’’

এনআরসি-আতঙ্কে রাজ্যে একের পর এক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তার কোনওটা আত্মহত্যা, কোনওটা বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যু। এই আবহে মঙ্গলবার ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের মায়ের নামাঙ্কিত ভগবতী বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠানে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি বীরসিংহের মাটিতে এসে বলে যাচ্ছি, বাংলায় কোনও মতে এনআরসি হতে দেব না। দশ বছর অন্তর জনগণনা হয়। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’

অন্য দিকে, মেদিনীপুরে দলীয় সমাবেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র মমতাকে কটাক্ষ করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মানুষ আতঙ্কিত। আতঙ্কিত তো আপনিই করছেন। দিল্লিতে গিয়ে আপনার যেটা বলার কথা, আপনি সেটা বলছেন না। যেটা করার কথা, সেটা আপনি সময়মতো করছেন না।’’ একই সুরে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘যাঁরা মারা গিয়েছেন, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই এফআইআর হওয়া দরকার। উনিই তো এনআরসি নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছেন।’’

বিদ্যাসাগরের জন্মভিটের গ্রাম তো বটেই, গোটা বীরসিংহ পঞ্চায়েত এলাকাতেই গত লোকসভা ভোটে মাথা তুলেছে পদ্ম। ভোটপ্রাপ্তির অঙ্কে পঞ্চায়েতের ১৯টি সংসদের মধ্যে ৫টিতেই এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই এনআরসি প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগরের গ্রামে তাঁর স্মৃতি-আবেগকে পুঁজি করে মমতা সেই ‘রাজনৈতিক ক্ষত’ মেরামতের চেষ্টা করছেন বলে পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা।

বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা ভাগের অপচেষ্টার অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগর ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতা, আপসহীন সংগ্রামী বাংলার প্রতিচ্ছবি, তিনি ছিলেন আমাদের প্রাণের পুরুষ।’’ বিজেপি-কে কোনও ভাবে বিশ্বাস না করার পরামর্শ দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ওদের বিশ্বাস করবেন না। বিশ্বাস করলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে, স্বামী বিবেকানন্দকে করবেন। নিজের মাকে সম্মান না জানিয়ে মাসিকে সম্মান জানানো যায় না। বর্ণপরিচয় শুধু বাংলার ভাষা নয়, গোটা দেশের ভাষা। আমাদের সংবিধান অনেক ভাষাকে অনুমোদন দিয়েছে। সবাইকে নিয়ে চলতে চাই।’’

বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় ফের বিজেপিকে আক্রমণ করে এ দিন মমতার বার্তা, ‘‘একদল ধর্মান্ধ লোক বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিল। ওরা হয়তো বিদ্যাসাগরকে চেনেই না। তবে মূর্তিটা ভেঙে দিল! একবারও ভাবল না বিদ্যাসাগরের মূর্তি শুধু একটা মূর্তি নয়। এই মূর্তি একটা সভ্যতা, একটা যুগ, একটা সংস্কৃতি।’’

এ দিন বীরসিংহের উন্নয়নে নানা ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছেন। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতিটি স্কুলে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিটি জেলার একটি করে কলেজকে বিদ্যাসাগর বিষয়ক সেমিনার আয়োজনে দু’লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy