রাজ্যে মাছ চাষের উৎপাদন বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স কমিটির সুপারিশ রূপায়ণের জন্য মৎস্য দফতর দু’-দু’টি কমিটি গড়েছে। কিন্তু চার বছর পরেও সেই দুই কমিটির রিপোর্ট নবান্নে পৌঁছয়নি। নবান্ন সূত্রের খবর, মৎস্য দফতরের রিপোর্ট তৈরি না-হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কৈফিয়ত তলব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কে দেবেন কৈফিয়ত? প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের মতে, দফতরের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে কৈফিয়ত দেওয়ার কথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহেরই।
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের এপ্রিলে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে মাছ চাষের সম্প্রসারণ, মৎস্য দফতরের কর্মী পুনর্বিন্যাস-সহ বিভিন্ন কাজের জন্য সাত সদস্যের টাস্ক ফোর্স কমিটি গড়া হয়েছিল। ব্লক-ভিত্তিক মাছ চাষের উৎপাদন বাড়াতে ওই কমিটি ১০৪ পাতার সবিস্তার রিপোর্ট দেয়। তদানীন্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের নেতৃত্বে কমিটিতে ছিলেন মৎস্য, সেচ, কৃষি, কৃষিবিপণন এবং জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের তৎকালীন মন্ত্রীরা এবং রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র।
টাস্ক ফোর্স কমিটির রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে মৎস্য দফতরের তরফে প্রথমে ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর এবং ২০১৭ সালের ১৫ জুন দু’টি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেই সব বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী টাস্ক ফোর্স কমিটির সুপারিশ রূপায়ণে দু’মাসের মধ্যে মৎস্য দফতরের সংশ্লিষ্ট দু’টি কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় চার বছরেও মৎস্য দফতরের ওই দুই কমিটি কোনও রিপোর্টই পেশ করেনি। একটি কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘টাস্ক ফোর্স কমিটির সুপারিশ রূপায়ণে বৈঠক ডাকার কথা চেয়ারম্যানের। যত দূর মনে পড়ছে, প্রথম দিকে একটা-দু’টো বৈঠক হয়েছিল। তার পরে আর হয়নি।’’
কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান, রাজ্যের মৎস্য দফতরের অধিকর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার মন্ত্রী বলবেন।’’ টাস্ক ফোর্স কমিটির সুপারিশ মেনে মৎস্য দফতরের তরফে রিপোর্ট যে এখনও তৈরি হয়নি, তা স্বীকার করে নিয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘মূল রিপোর্ট তৈরি না-হলেও টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ মেনেই কাজ করছে মৎস্য দফতর। মাছের উৎপাদন বাড়াতে কিছু প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।’’
টাস্ক ফোর্স কমিটির সুপারিশে মাছের উৎপাদন বাড়াতে কিছু বিষয়ে জোর দিতে সুপারিশ করা হয়েছিল। তার মধ্যে আছে: ১) রাজ্যের সব দফতরের জলাশয়কে মৎস্য দফতরের আওতায় এনে মাছ চাষের উপযোগী ও উৎপাদনমুখী করে তুলতে হবে। ২) মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত সকলকে নিয়ে গঠন করতে হবে ‘রাজ্য মৎস্য কমিশন’। ৩) জেলার মৎস্য খামারগুলির পুনরুজ্জীবন এবং নতুন প্রযুক্তির হ্যাচারি স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় ভাল মানের মাছের চারা সরবরাহ করতে হবে চাষিদের। ৪) প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘মৎস্যবন্ধু’ নিয়োগ করতে হবে। ৪) মৎস্য আধিকারিকের শূন্য পদ পূরণের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, প্রাণিসম্পদ দফতরের মতো প্রতিটি ব্লকে মৎস্য বিভাগকে এক ছাতার তলায় আনতে হবে। ৫) কৃষি দফতরের মতো মৎস্যচাষিদেরও ক্রেডিট কার্ড চালু করতে হবে এবং বিভিন্ন হ্যাচারিতে সহায়ক-মূল্যে বিদ্যুৎ দিতে হবে।
টাস্ক ফোর্স কমিটির সুপারিশ আছে। তার রূপায়ণে জোড়া কমিটির রিপোর্টের অভাবে মাছ চাষের বিভিন্ন প্রকল্প থমকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মৎস্য বিভাগের অফিসার সংগঠনও। ‘‘চার বছরেও টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ রূপায়ণে মৎস্য দফতরের কোনও রিপোর্ট জমা পড়ল না। কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থেই আমরা চাই, অবিলম্বে রিপোর্ট জমা পড়ুক,’’ বলেন স্টেট ফিশারিজ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস খাটুয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy