স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।—ছবি পিটিআই।
সমন্বয়ের দায়িত্ব যে শুধু রাজ্যের নয়, শুক্রবার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির (ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিল) বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রের যে আরও দায়বদ্ধ হওয়া উচিত, এ দিন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষকর্তাদের রীতিমতো উদাহরণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার দাবি, ‘‘রাজ্যে নির্বাচিত সরকার। কেন্দ্রেও তাই। যার যেটা প্রাপ্য, তার সেটা পাওয়া উচিত। কারও ব্যাপারে কারও খবরদারি করা উচিত নয়। সংবিধান অনুযায়ী সবাই চলুক।, পূর্ব ভারতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পূর্বাঞ্চল খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
পূর্বাঞ্চলের বাকি রাজ্যগুলির তুলনায় উন্নয়ন-পরিকাঠামো এবং সমন্বয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি বক্তব্য ছিল বাংলার। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে পাশে নিয়ে নদী-জলের বিভাজন থেকে মাঝেরহাট সেতু নির্মাণের কাজ আটকে থাকা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে প্রাপ্য অর্থ এবং বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতা যে আরও প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে যাবতীয় তথ্যও দেন। সূত্রের দাবি, কোনও মন্তব্য না করলেও বৈঠকে মমতার সব বক্তব্য বিশেষ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মহানদীর জলবন্টন নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছিল বিহার। তাদের বক্তব্য ছিল, মে মাসে জল পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুক পশ্চিমবঙ্গ। মমতা যুক্তি দেন, মে মাসে বৃষ্টিপাত প্রায় হয়না বললেই চলে। ফলে নদীতে জলের পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই চাইলেও বিহারকে জল দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু বিহার যেভাবে তেনুঘাটে জল ধরে রাখে এবং বর্ষার ভরা মরসুমে তা ছেড়ে দেয় তাতে বাংলায় বন্যাপরিস্থিতি তৈরি হয়, সেই প্রক্রিয়ায় বদল আনা প্রয়োজন। এই ভাবে সামগ্রিক নদী-জল সুষম বন্টনে নীতি তৈরির দাবিও জানিয়েছেন মমতা।
বিভিন্ন প্রকল্পে জমির ব্যবস্থা করার ব্যাপারে রাজ্য যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, সে কথা বৈঠকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাগডোগরা বিমানবন্দরর সম্প্রসারণ হোক, বা পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ একাধিক এলাকায় রেলওয়ে ওভারব্রিজের (আরওবি) জন্য জমির ব্যবস্থা— সব ক্ষেত্রে রাজ্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অপর দিকে কেন্দ্রেরও যে কিছু করণীয় রয়েছে, এ দিন তা-ও স্পষ্ট করে দেন তিনি। সূত্রের খবর, মমতা বৈঠকে জানিয়েছেন, রেলের দীর্ঘসূত্রতার কারণে গত প্রায় তিন বছর ধরে মাঝেরহাট সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। কারও সময় মতো রেলের ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। ফলে সমন্বয় যে উভয় দিক থেকে হওয়া প্রয়োজন, সেই দাবি এ দিন তুলেছেন তিনি। বৈঠকে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ, ভূমি দফতরের সচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র সহ বহু অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
মমতা রাজ্যের ঘাড়ে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকার দেনার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার করের বন্টন বাবদ অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। জিএসটি-এর ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য অর্থ সময়মতো দিচ্ছে না কেন্দ্র। বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র নিজের অংশিদায়িত্ব কমাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যকে নিজের মতো করে আয় করে সামাজিক প্রকল্পগুলির বিপুল খরচ চালাতে হচ্ছে।’’ উদাহরণ দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, রানীগঞ্জের খনি অঞ্চলের ধসের সমস্যায় বহু মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। বারবার বলা সত্ত্বেও কেন্দ্র অর্থ দিচ্ছে না।’’ শাহকে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ফণী এবং বুলবুলের পরে আপনার সঙ্গে কথা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীও ক্ষয়ক্ষতি বাবদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা মিলল না কেন?’’
বৈঠকের পরে মমতা বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, জিএসটি-এর ক্ষতিপূরণ বাবদ দু’মাসের মধ্যএ অর্থ পাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল কেন্দ্রের থেকে কার্যত তা পাওয়া যাচ্ছে ছ’মাসের মধ্যে। এতে আমাদের আর্থিক ভাবে অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের ৫০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য। সেটা ছাড়াও বুলবুল এবং ফণীর টাকা পাওয়া যায়নি। বাংলার প্রতি বঞ্চনা চলছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা (বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা) মনে করি, কয়লার যে সেস এবং রয়্যালটি পাওনার ব্যাপারে রয়েছে, তার সমাধান হওয়া জরুরি। ওয়াশ কোলের উপর ভিত্তি করে রয়্যালটি নির্ধারণ করা উচিত। ওঁরা ( কেন্দ্র) বলেছেন, পরে নীতিগত ভাবে বিষয়টা দেখবেন। কয়লা সব নিয়ে যাচ্ছে, কিছুই দিচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy