বক্তা: ইঁদপুরের বাগডিহার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
আদিবাসীদের ভোটে ভাগ বসাতে বিজেপি যে ‘সক্রিয়’, তা কার্যত মেনে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাঁকুড়ার আদিবাসী অধ্যুষিত ইঁদপুরের বাগডিহায় দাঁড়িয়ে বুধবার মমতা বিজেপির সেই ‘ছক’ মোকাবিলার বিশদ পথও বাতলান। এ দিন সেখানে জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি কখনও এলাকায় দেখেন কোনও লোক এসে হঠাৎ করে টাকা বিলোচ্ছে, হিন্দু-মুসলমান-আদিবাসীদের মধ্যে ভাগাভাগি করার চেষ্টা করছে, উল্টোপাল্টা প্রচার করছে, সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানাকে জানাবেন।
স্থানীয় পুলিশকে বলব, তাঁদের পুরস্কৃত করার জন্য। পুলিশ যদি না শোনে, ১০০ নম্বরে ডায়াল করবেন। না করলে অভিযোগ করবেন। আমার বাড়িতে জানাবেন। আমি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমার হাতে দেবেন। আমি মন দিয়ে তাঁদের চিঠি পড়ি।’’
জঙ্গলমহলে এখন যে মাওবাদী-সন্ত্রাস নেই, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘জঙ্গলমহলে এক সময়ে আমি এমন এমন এলাকা দেখেছি, যেখানে মাওবাদী-আতঙ্কে এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ ছিল। মাওবাদীরা গ্রামে গ্রামে অত্যাচার চালাত। আজকে গর্ব করে বলতে পারি কোনও মাওবাদী এ সব এলাকায় নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার, এখন জঙ্গলমহলেও বড় চ্যালেঞ্জ বিজেপি। এক সময়ে জঙ্গলমহলের দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সরব হয়ে মাথা তুলেছিলেন মাওবাদীরা। এখন সেই জায়গায় বিজেপিকে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর খোঁচা, ‘‘কয়েকটা নেতা হয়েছে। উদ্ভট নেতা। হঠাৎ করে টাকা তোলবার জন্য বলে বেড়াচ্ছে, আদিবাসীদের জন্য কিছুই হয়নি। আমি বলি কোথায় ছিলে? বেলপাহাড়িতে আমি দেখেছি, গাছের মূল খেয়ে, পিঁপড়ের ডিম খেয়ে লোকে থাকত। কোনও দিন তাঁদের কেউ দেখেছেন? কেউ দেখেননি। আজকে মা-বোন ভাইয়েরা ভাল আছেন। হাসপাতাল তৈরি হয়েছে জঙ্গলমহলে। সমস্ত জেলায় উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। গরিবরা দু’টাকা কিলো চাল, গম পায়।’’
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই করছে, এই প্রসঙ্গেই তারও উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য দফতর বলছে, চাল দিতে পারবে না। আমি বলছি দেওয়ার দরকার নেই। আমার যা চাল আছে, তাই দিয়ে মিড-ডে মিল খাওয়াব। তোমাদের চোখ রাঙানি সহ্য করব না। বাংলাকে ভাতে মেরে কোনও লাভ নেই। বাংলার ঘরের ঘরে ভাত তৈরি হয়। আমরা ধান ফলাই।’’
বিজেপি-শাসিত রাজস্থানে কাজে যাওয়া মালদহের প্রৌঢ়কে যে ভাবে কুপিয়ে, পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, এ দিনও ফের সে কথা তুলে মমতা জানিয়ে দেন, যাঁরা অন্য রাজ্যে কাজে গিয়েছেন, তাঁরা যদি ফিরে আসেন, তা হলে এখানে কোনও না কোনও কাজ জুটবেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাংলা অনেক কর্মসৃষ্টি করছে। আরও করবে। ৮১ লক্ষ মানুষকে কাজ দিয়েছি। আরও হবে। নোটবন্দির পরে দেড়-দু’লক্ষ মানুষ বেকার হয়েছেন। যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছি। চায়ের দোকানও করতে পারবেন।’’
এ দিন ইঁদপুরের বাগডিহা এলাকায় সভা সেরে মুকুটমণিপুর যাওয়ার পথে আদিবাসী মেয়েদের আলপনা দেখে থামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুটমণিপুর ঢোকার পথেই রাস্তার পাশে স্থানীয় কিছু আদিবাসী মেয়ে আলপনা আঁকছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে মমতা কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। কাছে গিয়ে বিষয়টি দেখে উৎসাহ প্রকাশ করেন তিনি। আলপনার উপর হাঁটলে তা নষ্ট হবে কি না, তা-ও জানতে চান। কী ভাবে এই আলপনা আঁকা হচ্ছে সেই প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আলপনা পছন্দ হওয়ায় কলকাতা শহর সাজানোর ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy