তিহার জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে মানুষের ভিড় ঠেলে বোলপুর নিচুপট্টির বাড়িতে ফিরলেন অনুব্রত মণ্ডল ও মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল।মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বিস্তর জল্পনা ছিল। যদিও দিনের শেষে সাক্ষাৎ হল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের।
মঙ্গলবার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বীরভূমের বোলপুরে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনই সকালে বোলপুরের নিচুপট্টিতে, নিজের বাড়িতে ফেরেন অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা। ফলে, জেলা তৃণমূলের অন্দরে চর্চা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী কি তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন? কিন্তু, তা হয়নি। বৈঠক শেষ করেই মমতা কলকাতার দিকে রওনা দেন। অনুব্রত নিয়ে কোনও মন্তব্যও শোনা যায়নি তাঁর মুখে। মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে কি না। মমতা বলেন, “না। এটা প্রশাসনিক বৈঠক।”
মমতা ও তাঁর ‘স্নেহের’ কেষ্টর সাক্ষাৎ না হওয়া নিয়েও এখন শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। তিনি ‘সচেতন ভাবেই’ কেষ্ট-সাক্ষাৎ এড়ালেন কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে। অনুব্রত অবশ্য বোলপুরে পৌঁছেই বলেন, “দিদির জন্য আছি, বরাবরই থাকব।” তবে, তৃণমূলেরই বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, এ দিন দলনেত্রী ফোন করে অনুব্রত এবং সুকন্যার খোঁজখবর নিয়েছেন। কেন মমতা দেখা করলেন না, সেই প্রসঙ্গে কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “গরু পাচার মামলায় ইডি এবং সিবিআইয়ের তদন্তে অনুব্রতের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে। বেনামে জমি ও সম্পত্তি করার তথ্যও পাওয়া গিয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে। সেই সব কথা মাথায় রেখে হয়তো দলনেত্রী এ দিন সাক্ষাৎ এড়িয়েছেন।” আর এক নেতার মতে, এ দিন প্রশাসনিক কাজে বোলপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন নিজের কর্মসূচি। কেষ্টর সঙ্গে দেখা করলে বিরোধীদের হাতে নতুন ‘অস্ত্র’ তুলে দেওয়া হতে পারে, হয়তো সেটাও ভেবেছেন।
জেলা তৃণমূল চর্চা চলছে আরও একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এ দিন অনুব্রতের ফেরার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে অন্যদের সঙ্গে গিয়েছিলেন বোলপুরের বিধায়ক ও কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং সিউড়ির বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। সূত্রের খবর, কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ-সহ অনেকেই বাড়ির ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেলেও ওই দু’জনকে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বেশ কিছুক্ষণ। পরে তাঁরা পাশেই অনুব্রতের দাদার বাড়িতে কিছুক্ষণ বসে বেরিয়ে যান। অনুব্রত তাঁদের সঙ্গে এ দিন দেখা করেননি।
কেন জেলার দুই প্রভাবশালী নেতার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটল, সেটা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। জেলা তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণ কি বদলাতে শুরু করল, অনুব্রত কি কোনও বার্তা দিতে চাইলেন ওই দুই বিধায়ককে— এমন প্রশ্নও উঠছে দলে। বিকাশ ও চন্দ্রনাথের অবশ্য দাবি, সংবাদমাধ্যম ভুল ব্যাখ্যা করছে।তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পরে দেখা করবেন বলেছেন।
এ দিন সকাল থেকেই বোলপুরে নিচুপট্টির বাড়ির সামনে ভিড় জমতে শুরু করেছিল অনুব্রতের অনুগামী নেতা-কর্মীদের। সেই ভিড় ঠেলে অনুব্রতের গাড়ি বাড়ি পর্যন্ত আসতেই দীর্ঘক্ষণ লেগে যায়। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছনোর সময় তাঁকে ঘিরে ভিড় উপচে পড়ে। কোনও মতে মেয়েকে নিয়ে ভিতরে ঢোকেন অনুব্রত। বাড়ির সামনেই উচ্ছ্বসিত কর্মী-সমর্থকেরা আবির খেলেছেন, বিলি করেছেন নকুলদানাও।
অনুব্রতের সঙ্গে মমতার দেখা না হওয়া প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এটা সাময়িক ছাড়। আগামী দিনে বিচার হবে ও অনুব্রত মণ্ডলকে জেলে যেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এই ভবিষ্যৎটা জানেন বলে দেখা করছেন না।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না, এই রকম একটা ভাব করে মুখ্যমন্ত্রী নিজে হয়তো দেখা করেননি। কিন্তু তাঁর নির্দেশ মেনে দলের নেতা-কর্মীরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলে অনুব্রতের কদর কত!” প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরও মতে, “তৃণমূল যা বার্তা দেওয়ার, দিয়ে দিয়েছে।’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত সরকারি কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। সেখানে অন্য কারও সঙ্গে দেখা হওয়া বা না-হওয়া নিয়ে কী বলার থাকতে পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy