Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

চিঠি পরিবারের: ময়না তদন্তের ঘরে বাইরের লোক

সূত্রের খবর, এ বিষয়েই সিবিআইকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে মৃতার পরিবার। যা সুপ্রিম কোর্টেও আলোচনায় উঠে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছে সিবিআইকে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৫
Share: Save:

ঠিক হয়েছিল, পরিবারের প্রতিনিধিদের থাকতে দেওয়া হবে ময়না তদন্তের সময়ে। বলা হয়েছিল, পরিবার যাঁকে যাঁকে চাইবে, মৃতার তেমন সহপাঠীরাও থাকতে পারবেন ময়না তদন্ত চলাকালীন। এক প্রতিবেশীও বুঝিয়েছিলেন, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর ‘চেনা লোক’ রয়েছেন। ফলে এখানে ময়না তদন্ত হলে তিনি ‘দেখে নেবেন সবটা’। কিন্তু অভিযোগ, পরিবারের প্রতিনিধিদের থাকতে দেওয়া তো দূরস্থান, কিছু ক্ষণের মধ্যেই বার করে দেওয়া হয় মৃতার দু’জন সহপাঠীকেই। বদলে ময়না তদন্তের ঘরে ঢুকে আসে কিছু বাইরের লোক। আশ্বাস দেওয়া সেই প্রতিবেশীও চুপ। মৃতার মা এখন বলছেন, ‘‘তা হলে কাকে বিশ্বাস করব? ময়না তদন্তই ঠিকঠাক হয়নি। শুনছি, ম্যাজিস্ট্রেটকেও অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল!’’

সূত্রের খবর, এ বিষয়েই সিবিআইকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে মৃতার পরিবার। যা সুপ্রিম কোর্টেও আলোচনায় উঠে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছে সিবিআইকে।

কী আছে ওই চিঠিতে? সূত্রের খবর, বেশ কিছু ‘সন্দেহজনক’ বিষয় উল্লেখ করার পাশাপাশি ময়না তদন্ত করার দিন কী ঘটেছিল, সেই ঘটনাপ্রবাহ চিঠিতে লেখা হয়েছে। এর পরেই ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক এবং এর সঙ্গে যুক্ত আরও কয়েক জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সূত্রের খবর, মৃতার পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ময়না তদন্ত হবে বলে তাঁরা রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা চেয়েছিলেন, সেই ময়না তদন্ত আর জি করে নয়, শহরের অন্য কোনও মেডিক্যাল কলেজে বা এস এস কে এম হাসপাতালে হোক। পরিবারের অভিযোগ, এক দল চিকিৎসক, চিকিৎসক-পড়ুয়া এবং কয়েক জন প্রতিবেশী বোঝান, এ নিয়ে ঝামেলার প্রয়োজন নেই। সেই সূত্রে ওই প্রতিবেশী ‘ভিতরে লোক আছে, নজর রাখা হবে’, বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু মৃতার মায়ের অভিযোগ, ওই চিকিৎসক এবং চিকিৎসক-পড়ুয়াদের এর পরে আর তাঁরা দেখতে পাননি। ফলে তাঁদের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, ওঁরা আদতে কারা ছিলেন? এই ঘটনায় ধৃত সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক-পড়ুয়াদেরই কি তাঁরা সে দিন ভরসা করে ফেলেছিলেন?

মৃতার পরিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছে, তাঁদের সন্দেহ আরও বাড়ে মৃতার এক সহপাঠীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরে। সূত্রের খবর, ওই সহপাঠী জানিয়েছেন, ময়না তদন্ত শুরু হওয়ার পরে ভিতরে বেশ কয়েক জন বাইরের লোক ঢুকে আসেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকেও নির্দিষ্ট সময়ের পরে অন্যত্র বসানো হয় বলে ওই সহপাঠীর দাবি। এর পরে নির্দেশ আসে দ্রুত সমস্তটা সেরে ফেলার। মৃতার শরীরের বেশ কিছু অংশের ছবি ওই সহপাঠী তুলে রাখেন। কিন্তু বাইরের যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, ছবি তুলতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের বাইরে বার করে দেন।

এই বাইরের লোকেরা কারা? সূত্রের দাবি, সিবিআই ময়না তদন্তের সঙ্গে যুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনও পর্যন্ত যে সময় সারণি পেয়েছে তাতে, বেলা ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে যান মৃতার ‘কাকু’ বলে পরিচয় দেওয়া স্থানীয় নেতা সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। বেলা ৩টের আশেপাশে ঘটনাস্থলে যান পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ। অভিযোগ, এর পরে এই দু’জনের তৎপরতায় হাসপাতাল চত্বরে ঘটে ‘অনেক কিছু’। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের আস্থাভাজন বলে পরিচিত কয়েক জন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক-পড়ুয়া। এ ব্যাপারে সন্দীপের সঙ্গে বিধায়ক নির্মলের বেশ কয়েক বার ফোনে কথা হয় বলেও সূত্রের দাবি। যদিও নির্মল সোমবার তা অস্বীকার করেন।

ঘটনার সময়ে হাসপাতালে হাজির মৃতার এক সহপাঠী মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের কী কী দাবি রয়েছে, কী ভাবে সুরতহাল আর ময়না তদন্ত হবে তা নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করছিলাম। সবেতেই মতামত দিচ্ছিলেন ওই কাকু। এর পরে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখিয়ে পুলিশদের হাত করেন তিনি। পুলিশও তাঁর কথাই শুনছিল। বেলা সাড়ে ৩টের পরে কাকুর তৎপরতা আরও বাড়ে বিধায়ক হাসপাতালে আসার পরে। আমাদের যে আট দফা দাবি সে দিন জমা করা হয়েছিল, তাতেও কী কী লেখা থাকবে আর কী বাদ যাবে তা-ও ঠিক করে দিচ্ছিলেন ওই কাকু।’’

চিকিৎসক-পড়ুয়াদের কয়েক জনের অভিযোগ, বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ বিধায়ক হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে তিনি এবং ‘নেতা কাকু’ বেশ কিছু ক্ষণ আলাদা করে কথা বলেন। থানায় গিয়ে অভিযোগ লিখিয়ে আসার ব্যাপারটা কাকুকে ‘দেখে নিতে’ বলেন বিধায়ক। সেই মতো মৃতার বাবাকে নিয়ে টালা থানায় অভিযোগ লেখাতে যান কাকু। নিজে হাতেই তিনি সেই বয়ান লেখেন। মৃতার মা’কে রেখে যাওয়া হয় হাসপাতাল মর্গে। অভিযোগ, বিধায়ক মৃতার মায়ের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন এবং ময়না তদন্ত, অভিযোগপত্র লেখার কাজ শেষ হতে না হতেই কাকু, বিধায়ক মৃতদেহ বাড়ির পথে পাঠিয়ে দেন। দু’জন মিলে মৃতার বাড়ির লোককে বুঝিয়ে হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে যান বলেও অভিযোগ। এর পরে মৃতার পরিবারের অনুপস্থিতিতে উত্তর ২৪ পরগনার একটি শ্মশানে সৎকার হয়।

বিধায়ক নির্মলকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ গুলো নিয়ে পরে কথা হবে। এখন সিবিআইকে সব বলছি।’’ তবে ওই কাকুর দাবি, ‘‘ময়না তদন্ত হবে কি হবে না, কোথায়, কখন, কী ভাবে হবে, সেটা আমার কথায় ঠিক হয়েছিল নাকি? চিকিৎসক-পড়ুয়াদের আট দফা দাবি মেনে নেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ময়না তদন্ত করিয়েছিল। পরিবারের সদস্য ও আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা সহমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে আমার একার ভয় দেখানো বা চাপ দেওয়ার কারণ তো নেই!’’

এই দাবি কতটা ঠিক? তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। সূত্রের খবর, অতীতে কয়েক বার তলব করার পরে ফের ডাকা হয়েছে কাকুকে।

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital CBI R G kar Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy