—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহের ময়না তদন্ত নিয়ে অন্তত দু’জন ডাক্তার এবং ডোমেদের বয়ানে ‘বিচলিত হওয়ার’ মতো তথ্য উঠে এসেছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি। ময়না তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস ছাড়াও আরও দু’জন চিকিৎসক এবং মর্গের একাধিক ডোমকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদের পরে ময়না তদন্তে গাফিলতির বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, দাবি সিবিআই সূত্রের।
তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, ময়না তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফির মান নিয়েও প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। ভিডিয়োগ্রাফিতে মৃতার দেহের আঘাতের চিহ্ন আদৌ স্পষ্ট নয় বলে দাবি করা হচ্ছে তদন্তকারীদের তরফে। এটা কি অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি? না জেনেবুঝে খামতি? দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে তা কেন ঘটেছে? এ সবই তদন্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বলেও সিবিআই সূত্রে প্রকাশ। সব মিলিয়ে ময়না তদন্তের রিপোর্টে সত্য আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে, এই সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেও তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে দাবি।
তদন্তে উঠে আসছে, ৯ অগস্ট সূর্যাস্তের পরে মাত্র এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মধ্যে মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ এবং পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ময়না তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। ওই দিন সন্ধ্যা ছ’টা থেকে ৭টা ১০ মিনিটের মধ্যে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “আর জি করের মর্গে সে দিন আটটি দেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছিল। সাতটিই সূর্যাস্তের আগে। একমাত্র চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহই সূর্যাস্তের পরে ময়না তদন্ত করা হয়। তিন জন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং দু’জন ডোম মিলে ময়না তদন্তের কাজ সারেন। এবং ওই ময়না তদন্তই সে-দিন মর্গে সব থেকে কম সময়ে সারা হয়েছিল।”
তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, এক জন চিকিৎসক বয়ানে জানিয়েছেন, সূর্যাস্তের পরে তাড়াহুড়ো করে ময়না তদন্তের ক্ষেত্রে তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আপত্তি শোনা হয়নি। সন্ধ্যায় ময়না তদন্তের জন্য কী ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাও সিবিআই খোঁজ করে বলে তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি। ভিডিয়োগ্রাফির আবছা ছবি দেখে কারও কারও সন্দেহ, যথেষ্ট আলো ছাড়াই ময়না তদন্ত করা হয়েছিল। ময়না তদন্তের কিছু পর্যবেক্ষণও তাই অসম্পূর্ণ বলা যায় বলে তাঁরা মনে করছেন। ময়না তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে এই প্রশ্নগুলির জবাবে কার্যত নিরুত্তর থাকেন বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ময়না তদন্তের সময়ে সাধারণত চিকিৎসকদের পাশাপাশি ডোমেরাও মৃতদেহের আঘাতের চিহ্নগুলি শনাক্ত করেন। এবং আঘাতের চিহ্নের একটি তালিকা তৈরি হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী আঘাতের চিহ্ন খুঁটিয়ে দেখেন ডাক্তারেরা। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ওই দিন ময়না তদন্তে উপস্থিত দু’জন ডোমকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে ময়না তদন্তে গাফিলতির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। মৃতদেহ কাটাছেঁড়া এবং সেলাই পর্বের নানা ধাপ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে খুঁটিয়ে কথা বলেছে সিবিআই। অনেক কিছুর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা মেলেনি বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।
সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, “সেমিনার হলে মৃতদেহ থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহে নানা গাফিলতি ধরা পড়েছে। এ বার ময়নাতদন্তের রিপোর্টের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়েও রহস্যজনক পরিস্থিতির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।” সিবিআই সূত্রে দাবি, ওই দিন সন্ধ্যার পরে মৃতদেহ সংরক্ষণ না করা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। আর জি করের মর্গের ফ্রিজ়ারে সে দিন জায়গা ছিল না বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে তদন্তকারীদের মতে, কোনও একটি মর্গে জায়গা নেই, এটা কখনওই এমন স্পর্শকাতর ঘটনায় দেহ সংরক্ষণ না করার যুক্তি হতে পারে না।
তদন্তকারীদের কথায়, ময়না তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে এখনও পর্যন্ত পাঁচ দফায় প্রায় ২২ ঘণ্টার কাছাকাছি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার অপূর্বকে তলব করা হয়েছিল। প্রয়োজনে ফের তাঁকে তলব করা হবে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy