লোকপুরে ভাঙচুরের পরে (বাঁ দিকে)। দুবরাজপুরে মেরে ফুলিয়ে দেওয়া হয়েছে পিঠ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, যুযুধান তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সংঘাত ততই বাড়ছে বীরভূমে। মহম্মদবাজার, পাড়ুইয়ের পরে এ বার খয়রাশোল ও দুবরাজপুর ব্লকেও ছড়াল অশান্তি। জখম হলেন ১০ জনেরও বেশি। আক্রমণের হাত থেকে মহিলা ও শিশুরাও রেহাই পায়নি বলে অভিযোগ। দু’টি জায়গাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। উত্তেজনা ও আতঙ্ক থাকায় দু’টি জায়গাতেই পুলিশ পৌঁছেছে। বিজেপি-র অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘সব বাজে কথা! ওই দুই ব্লক থেকেই ভোটে আমরা ৫০ হাজারের লিড পাব।’’
খয়রাশোল ব্লকের লোকপুর এবং দুবরাজপুরের বসহরি— এই দু’টি জায়গায় বুধবার দু’দলের সংঘর্ষ হয়েছে। বিজেপির দাবি, তাদের দলের লোকসভা প্রার্থীর সমর্থনে এক জয়গায় দেওয়াল লিখন ও অন্য জায়গায় পতাকা লাগানো হচ্ছিল। সেই প্রচারেই বাধা দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘বসহরি গ্রামে আমাদের বেশি কিছু কর্মী প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখছিল। সেই সময় বিনা প্ররোচনায় চড়াও হয় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। আমাদের দলের কর্মীদের ঘর ভাঙচুর করে এবং বেধড়ক মারধর করে ১৪ জনকে।’’ তাঁর দাবি, হামলায় আহতদের মধ্যে ৭ জন সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের কারও মাথা ফেটেছে, কারও হাত ভেঙেছে।
বিজেপি-র আরও দাবি, দুষ্কৃতীদের আক্রমণের হাত থেকে বাদ পড়েননি মহিলা ও শিশুরা। ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। কী ভাবে সুষ্টু নির্বাচন হবে?’’—প্রশ্ন রামকৃষ্ণবাবুর। বসহরি গ্রামের বিজেপি সমর্থক নিভা চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘সকালে পাড়ার ছেলেরা দেওয়াল লেখার সময় সশস্ত্র তৃণমূল দুষ্কৃতীরা ওদের মারধর করে। বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছে আমাকেও। কেন তৃণমূলের বাইরে অন্য দলের প্রচার চলছে, সেই রাগে আমার একমাত্র ছেলেকেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গিয়েছে। আমরা কিছু চাই না শুধু শান্তি চাই।’’ যদিও এই ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নয় বলেই দাবি করেছেন দুবরাজপুর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি ভোলানাথ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি সম্পর্কে বিশদে জানি না। তবে যেটুকু শুনেছি, ওটা গ্রাম্য বিবাদ। রাজনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি।
দু’পক্ষের সংঘাতে তপ্ত খয়রাশোলের লোকপুরও। বিজেপি-র খয়রাশোল ব্লক সভাপতি সুকুমার নন্দী জানান, বুধবার লোকপুর প্রচারে আসার কথা ছিল প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের। সেই জন্য মঙ্গলবার রাতে এলাকায় দলীয় পতাকা বাঁধছিলেন কর্মীরা। তাঁরা কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পরও চড়াও হয় দু্ষ্কৃতীরা। দু’জনকে মারধর করে। একটি ট্রলি ভাঙচুর করে। এই কাজ তৃণমূলেরই বলে দাবি সুকুমারবাবুর।
অন্য দিকে, তৃণমূলের লোকপুর অঞ্চল সভাপতি দেবু নন্দী ও নেতা শঙ্কর গড়াইরা বলছেন, ‘‘তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে পতাকা লাগাতে গিয়েছিল বিজেপির লোকজন। বাধা দেওয়ায় ওরাই আমাদের দু’জনকে মারধর করে। পরে আমাদের লোকজন জড়ো হলে নিজেদের ট্রলি ভাঙচুর করে সেই দায় আমাদের উপরের চাপানোর চেষ্টা করছে।’’ ঘটনা যাই হোক, দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদে তখন এলাকায় খুবই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy