Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

‘ভোট চাইতে এলে তো অপমান সইতেই হবে!’

চলতি নির্বাচনী মরসুমে নানা কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করা হয়েছে প্রার্থীদের। কিছু দিন আগে গ্লাভস পরে মিমি চক্রবর্তীর হাত মেলানোর ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ায় নিন্দার ঝড় ওঠে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে গ্লাভস পরা মিমি চক্রবর্তীর এই ছবি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে গ্লাভস পরা মিমি চক্রবর্তীর এই ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর নীচে মন্তব্য, ‘ভোট চাইতে নেমেছ মানে গদগদ চিত্তে অনুগত এঁটুলির মতো মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হবে! নয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমিই অ্যান্টিসোশ্যাল। ছ্যা ছ্যা পড়ে যাবে!’ তার নীচে আর এক মহিলার মন্তব্য, ‘ভোটের পরামর্শ, বুক ফাটলেও মুখ ফুটলে চলবে না’।

চলতি নির্বাচনী মরসুমে নানা কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করা হয়েছে প্রার্থীদের। কিছু দিন আগে গ্লাভস পরে মিমি চক্রবর্তীর হাত মেলানোর ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ায় নিন্দার ঝড় ওঠে। রিকশা নিয়ে প্রচারের সময়ে তোয়ালে পেতে বসায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়েছে সেই মিমিকেই। ছড়িয়ে পড়েছে ভোট প্রচারে গিয়ে চড়া গলায় তাঁর কথা বলার ভিডিয়োও। শুধু তিনিই নন, বেশ কয়েক বার তাঁর মতো এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে নুসরত জাহান এবং আরও অনেক প্রার্থীকেই। নিজেদের মতো করে তার উত্তরও দিয়েছেন সেই প্রার্থীরা। প্রশ্ন উঠছে, ভোটে দাঁড়ানোর অর্থ কি নিজের যাবতীয় পছন্দ-অপছন্দ, সুবিধে-অসুবিধে শিকেয় তুলে রাখা? মিমি চক্রবর্তী বললেন, ‘‘কেউ ট্রোল করবে বলে আমি মেপে চলতে পারব না। আমি যেমনটা, তেমনটাই থাকব।’’ তাঁর দাবি, প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার সময়ে হাতে ওষুধ লাগিয়ে তা ঢেকে রাখতেই গ্লাভস পরেছিলেন। কারণ, কয়েক দিনের প্রচারে হাতের বেশ কিছু জায়গা ছড়ে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘পোশাক নিয়ে আমাকে আগেও ট্রোল করা হয়েছে। অভিনেত্রীদের বোধ হয় বেশিই জাজ করা হয়।’’ বারবার চেষ্টা করেও অবশ্য এ বিষয়ে নুসরত জাহানের মন্তব্য জানা যায়নি। ফোন ধরেননি তিনি।

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলছেন, ‘‘অভিনেত্রী বলে তো বটেই, সেই সঙ্গে কম বয়স এবং রাজনীতিতে নতুন। ফলে ধরেই নেওয়া হচ্ছে, রাজনীতির কিছুই বোঝেন না, তাঁরা ভোট চাইতে এলে তো অপমান সইতেই হবে! অন্য পেশা থেকে ভোটে লড়তে এলে কিন্তু এমনটা হয় না।’’ মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায়ের আবার প্রশ্ন, ভোটে দাঁড়াতে হলে রোজের জীবন পাল্টে ফেলতে হবে নাকি? তাঁর মন্তব্য, ‘‘তা হলে তো আবার বলবে, ভান করছে!’’ রিমার মতে, ‘‘নেতাদের একটা ইমেজ আছে মানুষের মনে। তার বাইরের কেউ ভোটে লড়তে এলেই অনেকের সমস্যা হয়ে যায়। তখন ছোটখাটো জিনিস তুলে ধরে তাঁদের অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা হয়।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অর্ধসত্য তুলে ধরার বিষয়টিকে অপমান করে ভোট কাটার সংস্কৃতি বলে মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেরা কী করেছি, তা না বলে, অপরে কী ভুল করেছে তা-ই তুলে ধরে প্রচার হয় এখানে। এটাই এখানকার ভোট সংস্কৃতি।’’ আগেও এই ‘ভোট সংস্কৃতির কারণে তৃণমূলেরই আর এক তারকা প্রার্থী মুনমুন সেনকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল বলে অনেকের দাবি।

মুনমুন অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন থেকে পায়ের সমস্যায় ভুগছি। প্রচারে হয়তো কখনও কখনও তা প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদের কথা বলতে পারব না, তবে আমার সঙ্গে এ বার সে রকম কিছু হয়নি।’’

বিনোদন জগতের লোক না হয়েও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানালেন দক্ষিণ কলকাতার বাম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘আমাকেও অনেক কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। সে সব আর বলতে চাই না। আইনি পথেই এর মোকাবিলা করা ভাল।’’ আইনি পথে লড়াইয়ের পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতির জন্যও এ সব দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন জয়রঞ্জনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত আক্রমণ এখন এমন এক জায়গায় নেমে গিয়েছে যে, বিস্ময়কর লাগে। কোথাও একটা সত্যিই থামা দরকার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mimi Chaktaborty Nusrat Jahan Trolling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE