Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ধমক-চমক আর ধর্নায় দিন কাটল লকেটের

এ দিন হুগলির সব চেয়ে বড় অশান্তির ঘটনায় জড়িয়ে যায় লকেটের নাম। ধনেখালির মইদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫৯ নম্বর বুথে ইভিএম ভাঙার ঘটনায় কয়েক জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে কমিশন।

বচসা: গাড়ি ভাঙচুরের পরে তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে তর্ক লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। মইদিপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বচসা: গাড়ি ভাঙচুরের পরে তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে তর্ক লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। মইদিপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য ও তাপস ঘোষ
হুগলি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০৪:২৯
Share: Save:

দুধসাদা এসইউভি-র স্পিডোমিটার জানান দিচ্ছে, গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। ছুটছেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তবে সোমবার সারা দিনই তাঁর গতিবিধি সীমাবদ্ধ থাকল প্রধানত ধনেখালি বিধানসভা কেন্দ্রেই। বাকি দিন কাটল কখনও থানায়, কখনও বা জেলাশাসকের কার্যালয়ে ধর্নায়।

কিন্তু এ দিন হুগলির সব চেয়ে বড় অশান্তির ঘটনায় জড়িয়ে যায় লকেটের নাম। ধনেখালির মইদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫৯ নম্বর বুথে ইভিএম ভাঙার ঘটনায় কয়েক জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে কমিশন। লকেটের নামও আছে সেই তালিকায়। ওই বুথে পৌঁছে প্রিসাইডিং অফিসার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের পাশের ঘরে খেতে দেখে ক্ষুব্ধ লকেট ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলে সরব হন। বচসা বাড়তেই উত্তেজিত জনতা তেড়ে যায় লকেটের দিকে। তাঁর গাড়ির কাচ ভাঙা হয়। আক্রান্ত হন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। লকেট এলাকা থেকে বেরিয়ে প্রথমে বিডিও এবং পরে সরাসরি ধনেখালি থানায় পৌঁছে অভিযোগ দায়ের করেন। তত ক্ষণে সংবাদমাধ্যমের দু’টি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। মার খেয়েছেন কয়েক জন সাংবাদিকও। তাঁদের অনেককেই আটকে রাখা হয় ওই বুথে। পরে পুলিশবাহিনী গিয়ে আটকে থাকা সাংবাদিকদের উদ্ধার করে।

পরে লকেট বলেন, “অসীমা পাত্রের বোন গোটা ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। আকণ্ঠ মদ্য পান করা তৃণমূলকর্মীরা আমাকে হেনস্থা করে। ধনেখালির অন্তত ১০০টি বুথে কারচুপি করা হয়েছে। সেখানে পুনর্নির্বাচন চাইব। সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে। ভোট হয়নি। কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা যথাযথ নয়। আমাকে বেলা ৩টে পর্যন্ত ধনেখালিতেই আটকে থাকতে হল! এটা তো হওয়ার কথা নয়। সংবাদমাধ্যমের উপরে আক্রমণ করে ওরা সব লুকোতে চেয়েছে।” লকেটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অসীমা বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। অসুস্থ মাকে নিয়ে আমার বোন ভোট দিতে গিয়েছিল। ও কোনও দল করে না। আমার বুথ এজেন্টকে টেনে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। সারা দিন (লকেট) দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আমি তো এক বারের জন্যও বাইরে বেরোইনি।’’

এ দিন ধনেখালির পরিস্থিতি লকেটকে সারা দিন কার্যত সেখানেই আটকে দেয়। শাসক দলের মতো নিজের দলের সংগঠনের জোর তেমন নেই। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সম্ভবত সেই কারণেই ধনেখালির বাছাই করা বুথগুলিতে সারা দিন ধরে নিরন্তর ঘুরে বেড়ালেন লকেট। প্রতিটি জায়গাতেই তাঁর নিশানা ছিল দু’টি। প্রথমত, শাসক দলের বুথ এজেন্ট। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিপক্ষের ভোট মেশিনারিকে কার্যত ধমকে-চমকে নিজের কর্মীদের চাঙ্গা করার কৌশল মেনে চললেন পুরো সময়।

দশঘড়া বয়েজ স্কুলে দেখা গেল, উর্দি খুলে বিশ্রাম নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। তা দেখেই তাঁদের চেপে ধরেন লকেট। তিনি প্রশ্ন তুললে জওয়ানদের সাফাই, তাঁরা কর্তব্যরত নন বলেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই বচসার পরে লকেট বলেন, “কিচ্ছু করছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। বেলা ১২টায় বিশ্রাম নিচ্ছে! পুলিশ পর্যবেক্ষককে জানিয়েও কাজ হয়নি। পুরোপুরি ব্যর্থ প্রশাসন।”

এ দিন ধনেখালি থেকে সরাসরি জেলাশাসকের দফতরে চলে যান লকেট। ওই এলাকায় পুনরায় ভোটের দাবিতে অবস্থান শুরু করেন তিনি। পরে জেলাশাসকের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস পেয়ে অবস্থান প্রত্যাহার করেন লকেট। সাড়ে ৬টা নাগাদ বাড়ি পৌঁছন তিনি। প্রার্থীর বিক্ষোভ, অবস্থান, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই জেলা বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, ভোট হয়েছে মোটের উপরে ভালই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE