রাজেশ কুমার, জ্ঞানবন্ত সিংহক ও অনুজ শর্মা।
লোকসভা ভোট শুরুর আগে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে বড় রদবদল করল নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার রাতে এক নির্দেশেই সরিয়ে দেওয়া হল কলকাতা ও বিধাননগরের দুই পুলিশ কমিশনার এবং বীরভূম ও ডায়মন্ড হারবারের দুই পুলিশ সুপারকে। কমিশন বলেছে, এই নির্দেশ অবিলম্বে বলবৎ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে কমিশনে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
অনুজ শর্মার জায়গায় কলকাতা পুলিশের কমিশনার হচ্ছেন রাজেশ কুমার। তিনি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এডিজি-পদে ছিলেন। বিধাননগরের সিপি জ্ঞানবন্ত সিংহকে সরিয়ে সেই জায়গায় নিযুক্ত করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের এডিজি (অপারেশন্স) নটরাজন রমেশ বাবুকে। ডায়মন্ড হারবারের এসপি এস সেলবামুরুগানের জায়গায় এলেন কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের ডিসি শ্রীহরি পাণ্ডে। বীরভূমের এসপি শ্যাম সিংহকে সরিয়ে সেই পদে পাঠানো হয়েছে বিধাননগরের ডিসি (এয়ারপোর্ট ডিভিশন) আভারু রবীন্দ্রনাথকে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এই বদলের কোনও কারণ জানানো না হলেও কমিশনের শীর্ষ স্তরের মতে, ওই চার আইপিএস অফিসার স্বপদে থাকলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব নয়। তাই সরানো হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, ওই চার জনের বিরুদ্ধেই বিজেপি-সহ বিরোধী পক্ষ অভিযোগ করেছিল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবনে সিবিআই অফিসারেরা অভিযানে যাওয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ধর্না-মঞ্চে কিছু শীর্ষ পুলিশকর্তার উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। রাজ্যের আইপিএসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। সেই পুলিশকর্তাদের মধ্যে ছিলেন অনুজ এবং জ্ঞানবন্ত। অনুজ ছিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সেই থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। অভিযোগের সমর্থনে ধর্না-মঞ্চের ছবিও ব্যবহার করেছে তারা। বিমানবন্দরে সোনা-কাণ্ডেও বিজেপি অভিযোগ এনেছে জ্ঞানবন্তের বিরুদ্ধে।
পুলিশ আধিকারিক বদলের নির্দেশিকার প্রতিলিপি
ডায়মন্ড হারবারের এসপি-র বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। ঘটনাচক্রে ওই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ এবং এ বারেও প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রেই বিমানবন্দরে সোনা-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তাঁর স্ত্রী রুজিরার। যা নিয়ে মামলা চলছে। কমিশনের খবর, বীরভূমের এসপি শ্যাম সিংহের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। এমনিতেই রাজ্য-রাজনীতিতে বীরভূম বিতর্কের কেন্দ্রে। ওই জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এ বার ভোট শুরু হতেই নকুলদানা খাওয়ানোর তত্ত্ব জাহির করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সেই ঘটনায় তাঁর কৈফিয়ত তলব করেছে কমিশন।
অপসারিত চার জন আইপিএস অফিসারকে কোন পদে পাঠানো হবে, তা অবশ্য বলেনি কমিশন। তাদের নির্দেশ, ওই চার জন যেন ভোটের কোনও কাজে না-থাকেন। ২০১৬-য় রাজ্যে বিধানসভা ভোট শুরু হওয়ার পরে (কলকাতায় ভোটের আগে) একই রকম অভিযোগের ভিত্তিতে তখনকার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়েছিল কমিশন। সিপি করা হয় সৌমেন মিত্রকে। কিন্তু ভোট মিটতেই ফের ক্ষমতায় এসে সৌমেনকে সরিয়ে রাজীবকে কলকাতার সিপি-পদে পুনর্বহাল করে তৃণমূল সরকার। ভোটের আগে কমিশনের নির্দেশে অপসারিত পশ্চিম মেদিনীপুরের তদানীন্তন এসপি ভারতী ঘোষকেও পুনর্বহাল করা হয়েছিল। এ বার ভোট মিটলে তেমন ঘটনা ঘটবে কি না, সেটাই দেখার।
ভোটের মুখে কমিশনের নির্দেশে পুলিশকর্তাদের বদলির ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধীরা। শাসক দল তৃণমূল অবশ্য বেশি রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খোলেনি। তবে শাসক দলের প্রথম সারির এক নেতা বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কমিশনই। তবে বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সব কিছু পরিচালিত হলে মুশকিল!’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কমিশন ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই পুলিশ অফিসারদের কেউ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্নায় বসেছিলেন, কেউ সোনা-কাণ্ডে অভিযুক্তকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন। ওঁদের দায়িত্বে রেখে নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব হত না।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। অনেক পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আসছে, তাঁরা যা ভূমিকা নিচ্ছেন, তাতে ওসি পর্যন্ত নানা স্তরে আরও অনেক বদল করতে হবে। ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্নায় থাকা আধিকারিককে পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব দিলে যে সমস্যা হবেই, এটা প্রশাসনের বোঝা উচিত ছিল। পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের আবেদন করব, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিন। শাসকের পদলেহন করতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন না,’’ বলেন সুজনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy