বীরভূমের ইলামবাজারের পাইকুনি গ্রামে জ্বলছে বাড়ি। মঙ্গলবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের পরের দিনই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল ইলামবাজারের ধরমপুরের পাইকুনি গ্রামে। অভিযোগ উঠল, সিপিএমের পোলিং এজেন্টের বাড়িতে আগুন দিয়েছে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। আগুন ছড়িয়েছে এলাকার আরও কয়েকটি বাড়িতে। শাসকদলের পাল্টা অভিযোগ, আগুন লাগানো হয়েছে সেখানকার এক তৃণমূলকর্মীর বাড়িতেও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে ইলামবাজারের ধরমপুরের পাইকুনি গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট শেখ খিলাফতের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয় তৃণমূল সমর্থক শেখ মুবারকের। সিপিএমের অভিযোগ, ওই সময়েই তৃণমূলের কয়েকজন শেখ খিলাফতের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তৃণমূলের পাল্টা নালিশ, শেখ মুবারকের বাড়িতে আগুন লাগায় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা।
এ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম নিজেরাই আগুন লাগিয়ে আমাদের নামে অভিযোগ করছে। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগাযোগ নেই।’’ সিপিএম নেতা তথা বোলপুরে কেন্দ্রের বামপ্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের বক্তব্য, ‘‘আমাদের পোলিং এজেন্টের বাড়িতে তৃণমূলের লোকেরা আগুন দিয়েছে। পাল্টা তৃণমূলের একটি বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর পেয়েছি, পাশের গ্রামেও দুষ্কৃতী-বাহিনী বেশ কিছু বাড়িতে আগুন দিয়েছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ইলামবাজার থানার পুলিশ। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
মল্লারপুরে দুই বিজেপি সমর্থক আহত হওয়ার পরে অভিযুক্তের বাড়ির সামনে এলাকার মহিলাদের বিক্ষোভ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
অন্য দিকে, ভোট মিটতেই ছবি বদলাল বীরভূমের নানুরের বন্দর গ্রামে। অভিযোগ উঠল, কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যেতেই সেখানে আনাগোনা শুরু হয়েছে মোটরবাইকে সওয়ার সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের। কাপড়, গামছায় মুখ ঢাকা সকলের। বিজেপির অভিযোগ, ওই গ্রামে তাদের দলের সমর্থকদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শাসকদলের দিকে আঙুল উঠলেও তা উড়িয়েছে তৃণমূল। শুধু বন্দর নয়, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার— মল্লারপুর থেকে সিউড়ি, শান্তিনিকেতন, অশান্তির খবর এসেছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
তপ্ত মল্লারপুরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে মল্লারপুর থানার বাউড়িপাড়ায় এক তৃণমূল কর্মী ধারালো অস্ত্রে দুই বিজেপি সমর্থককে আক্রমণ করেন। এলাকাবাসীর একাংশ বিকাশ পত্রধর নামে ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ পৌঁছে বিকাশবাবু এবং তাঁর স্ত্রীকে থানায় নিয়ে যায়। আক্রান্ত বিজেপি কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে পরে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে ময়ূরেশ্বরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক সভাপতি অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরাও বিকাশ পত্রধরের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে বলে শুনেছি। এলাকায় অশান্তি কোনও দিনই পছন্দ করি না।’’ লাভপুরের ঠিবাতে বিজেপি সমর্থক এক দম্পতিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
অন্য দিকে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন তৃণমূলের এক পোলিং এজেন্টও। বাঁচাতে গিয়ে জখম হন তাঁর স্ত্রী-ও। সোমবার রাতে শান্তিনিকেতনের বিনুরিয়া গ্রামে। অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। বিজেপির তরফে ওই ঘটনাকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলা বিজেপি সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘আতঙ্ক ছড়াতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে তৃণমূল।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বিজেপি তো এখন শক্তিশালী দল! ওরাই বিভিন্ন জায়গায় আমাদের লোকজনকে মেরেছে। এ সব বলে আমাদের হেয় করার চেষ্টা করছে। ২৩ মে-র পরে ওঁরা বুঝবেন মানুষ কাদের সঙ্গে রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy