ব্রাহ্মণবাড়ে বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখছেন বিমান বসু। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
পিংলার বিস্ফোরণ কাণ্ডে এ বার ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হলেন বামেরা। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়ে যান ১৫ জনের বাম প্রতিনিধি দল। এ দিন প্রথমে বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখেন বামফ্রন্টের রাজ্য চেয়ারম্যান বিমান বসু, ফব নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিএম নেতা রবীন দেব, আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পাণ্ডা-সহ অন্যান্যরা। পরিদর্শন শেষে জামনা মার্কেট কমপ্লেক্স এলাকায় এক সভাও হয়।
এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ব্রাহ্মণবাড়ে যান বাম প্রতিনিধিরা। বিস্ফোরণস্থলের চারিদিকে ছিল কড়া পুলিশি প্রহরা। এ দিন বিস্ফোরণস্থল থেকে বেশ কিছু স্প্লিন্টার কুড়িয়ে নেন বিমানবাবু। গ্রামবাসীদের দাবি, এখনও খুঁজলে বিস্ফোরণস্থলে অনেকের দেহাংশ পাওয়া যাবে। পরে কাছের একটি বাড়ির উঠোনে বসে গ্রামের মানুষের থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন।
প্রশান্ত প্রধান নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্র বিমানবাবুকে জানায়, “দিন দু’য়েক আগে রঞ্জন মাইতির বাড়িতে সিআইডি যখন গিয়েছিল, আমরা কয়েকজন বন্ধু সেখানে ছিলাম। ওঁদের ঘরে দু’টি বন্দুক দেখেছিলাম।” একইবাবে, ছবি মাণ্ডি বলে ওঠেন, “পুলিশকে কতবার এই বাজি কারখানার বিষয়ে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ কথা শোনেনি। উল্টে গ্রামের মানুষকে রঞ্জন মাইতি মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছিল। রঞ্জন বলত, ওর জমিতে ও যা কিছু তাই চাষ করতে পারে।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ শোনার পর সাংবাদিকদের সামনে রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বলেন, “এখানে এসে একটা নির্বাচিত সরকার আছে বলে মনে হল না। গাছের ওপর না হলে এখনও যাঁদের শরীরের অংশ ঝুলছে সেটাও এখনও পরিষ্কার হয়নি।” বিমানবাবু বলেন, “আজকে জানলাম বোমাও চাষ হয়। আর এই বোমা তৈরি, পাচারে যুক্ত ছিল তৃণমূল কর্মীরা। বোমার চাষ করতে গিয়ে যাঁদের ক্ষতি হয়েছে তার দায়িত্ব কে নেবে? সরকারকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
গত ৬ মে ব্রাহ্মণবাড়ে বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিন মুখ্যমন্ত্রী এখানে বিয়েবাড়ির বাজি তৈরি হত বলে দাবি করেছিলেন। সেই কথার উল্লেখ করে বিমানবাবু বলেন, “এটা বিয়েবাড়ির বাজি বলে মনে হল না। কারণ এই স্প্লিন্টার কখনও বিয়েবাড়ির বাজির জন্য লাগে না।” বিস্ফোরণস্থলে পড়ে থাকা ড্রামে চেন্নাইয়ের পেরাম্বুর থে কে রাসায়নিক মশলা আসত বলেও দাবি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের।
এই বিস্ফোরণের ঘটনাকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে ছ’দিন আগে বিস্ফোরণ হল। কৃষ্ণনগর লোকালে চলন্ত গাড়িতে বোমা ফেটেছে। অসহায় যাত্রীরা ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েছে।” সিআইডি তদন্তে নিয়ে বিমানবাবুর মন্তব্য, “আমরা মনে করি না সিআইডি তদন্তে বেশি কিছু বেরোবে। তবে ছ’দিন পরেও মাংসপিণ্ড গাছে ঝুলত না।’’ তাঁর দাবি, সিআইডি সরকারকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সিআইডি অফিসার তদন্তের আগেই বলে দিলেন বাজি তৈরি হত। বিমানবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হলেন সবচেয়ে বড় তদন্তকারী। সমস্ত গোয়েন্দা দফতর তুলে দেওয়া উচিত। গোয়েন্দা কুকুর বেচে দেওয়া উচিৎ। এখন মুখ্যমন্ত্রীর বাক্যই সিআইডির কাছে সত্য।”
অনুমতি না থাকায় সোমবার রাতেই জামনায় বামেদের সভামঞ্চ খুলে দেওয়ার কথা বলে পুলিশ। তবে মঙ্গলবার সভামঞ্চ ছাড়াই জামনা মার্কেট কমপ্লেক্সে দাঁড়িয়ে সভা করেন বাম প্রতিনিধিরা। সভায় বিমানবাবুর কটাক্ষ, ‘‘এই সরকার কাজের-কাজ কিছুই করে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই সভায় যাঁরা এসেছেন, একটু সাবধান থাকতে হবে। ওঁরা মিথ্যে মামলা করে। কারণ ওঁরা মানুষকে ভয় পায়।’’ বিমানবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের চেহারা এখন কী? প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম মারা গেলেন। তিনি তৃণমূলের পার্টি অফিসে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছিলেন। তৃণমূল এখন তৃণমূলের হাতেই নিরাপদ নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy